ঢাকা ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অচেনা কবুতরদের আট বছর ধরে খাওয়ান আশরাফুল

আঃ আজিজ, বিরামপুর, দিনাজপুর প্রতিনিধি

 

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার পৌর শহরের সবজি ব্যবসায়ী আশরাফুল (৫৫)। আট বছর আগে তাঁর দোকানের বারান্দায় এসেছিল একটি অচেনা কবুতর, কবুতরটিকে খেতে দেন তিনি। পরদিন একই সময়ে দোকানে আসে তিনটি কবুতর। তাদেরও খেতে দেন তিনি। এর পর থেকে দোকানের সামনে বারান্দায় বাড়তে থাকে কবুতরের সংখ্যা। এখন প্রতিদিন দুপুর সাড়ে ১টা বাজলেই দুই শতাধিক কবুতর এখানে এসে হাজির হয়। খাবার ছিটিয়ে দিলে তা খেয়ে আবার চলে যায়।

প্রতিদিন এমন দৃশ্য দেখা যায় আশরাফুলের দোকানের সামনে। তিনি এসব কবুতরকে প্রতিদিন নিয়ম করে দুপুরের খাবার হিসেবে গম খাওয়ান। কবুতরগুলো কোথা থেকে আসে, তা জানেন না আশরাফুল। তবে কবুতরগুলোকে খাবার দিয়ে তিনি আনন্দ পান। এসব কবুতরকে খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন তাঁকে দেড় থেকে দুই কেজি গম ছিটাতে হয়।

কবুতরগুলো টিনের চালে ঝাঁকে ঝাঁকে এলে কখনো আশরাফুল নিজে খাবার দেন। কখনো দোকানের কর্মচারী খাবার দেন। খাওয়া শেষে কবুতরগুলো চলে যায় যে যার গন্তব্যে। আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কবুতরগুলোকে এভাবে খাওয়াতে পেরে মনের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করে, নিজের মধ্যে তৃপ্তি লাগে।’

আশরাফুল জানান, সিলেটের হজরত শাহজালাল (রঃ)এর মাজারে ঝাঁকে ঝাঁকে জালালি কবুতর খাবার খায় ও উড়ে বেড়ায়। বিষয়টি দেখে তাঁর কবুতরের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। শুধু কবুতর নয়, সব জীবের প্রতি মানুষের দরদ ও ভালোবাসা দেখানো উচিত বলেও মনে করেন তিনি। কবুতর ছাড়াও একই সময়ে দোকানের টিনের চালে খাবারের জন্য আসে অচেনা ২০ থেকে ৩০টি কাক। তাদেরও নিয়ম করে খাবার হিসেবে পাউরুটির টুকরা ছিটিয়ে দেন টিনের চালে। দিনের বিভিন্ন সময় দোকানে খাবার খেতে মা-ছানাসহ আসে চারটি বিড়াল। পাশের আড়তের সবজি ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন আদর করে পুরুষ বিড়ালটির নাম রেখেছেন ‘সম্রাট’। নাম ধরে ডাকলে বিড়ালটি আশরাফুলের দোকানে ছুটে আসে খাবার খেতে। তাদের খাবার হিসেবে দেন পাশের দোকান থেকে কেনা কেক।

বিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপুল কুমার চক্রবর্তী বলেন, জীবে প্রেম তো নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় কাজ। ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম নিঃস্বার্থভাবে এতগুলো পশুপাখিকে প্রতিদিন খাবার দিচ্ছেন, সেটি প্রকৃতির প্রতি তাঁর অকৃত্রিম প্রেম। পশুপাখি থেকে কেউ কোনো স্বার্থ আশা করেন না।

সরজমিনে দুপুরের দিকে গিয়ে দেখা যায়, আশরাফুল ইসলামের দোকানঘরের টিনের চালের ওপরে জোড়ায় জোড়ায় কবুতর এসে জড়ো হচ্ছে। টিনের চালের ওপরে বিদ্যুতের তারে প‚র্ব-পশ্চিম লম্বা সারিতে বসে আছে অনেক কবুতর। বাকবাকুম, বাকবাকুম শব্দে মুখর সবজির বাজার। আশরাফুলের দোকানের এক কর্মচারী যেই না হাতে খাবারের থলে নিয়ে দোকানের বারান্দায় আসেন, তখনই কবুতরগুলো তাঁকে (কর্মচারীকে) ঘিরে উড়াউড়ি শুরু করে। খাবার ছিটিয়ে দিলে পাল্লাপাল্লি করে তা খেয়ে নেয়। তখন বাজারের অন্য দোকানি, ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ মুগ্ধ হয়ে এমন দৃশ্য উপভোগ করেন।

সবজি ব্যবসায়ী মঞ্জু রহমান বলেন, ‘আশরাফুল ভাই এলাকার একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি সারা দিন ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন। একটু গুরুগম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। তবে ব্যক্তি হিসেবে ভালো। তাঁর পরিবারে স্ত্রী, এক মেয়ে ও তিন ছেলে আছে। তিনি মামুদপুর গ্রামের মৃত ভরসা মন্ডলের ছেলে।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, আট থেকে আমি অচেনা কবুতরদের খেতে দিচ্ছি । কবুতরগুলোকে প্রতিদিন প্রায় দুই কেজি গম খেতে দেই। কাকের জন্য আলাদা বাজেট। কাকের জন্য ১০ টাকা দামের পাউরুটি ছিঁড়ে ছোট ছোট করে টিনের চালে ছিটিয়ে দেই। বিড়ালগুলোকেও খাবার দেই। এতে সব মিলে দিনে প্রায় ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং মাসে ৩ হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়।

নতুনবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাবলু বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে দেখছি, কবুতরগুলো বাইরে থেকে এখানে আসে। প্রতিদিন দুপুরে আশরাফুল কবুতরগুলোকে খাওয়ান। এটি তাঁর একটি মহৎ কাজ।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৪:৪৭:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪
৪৭ বার পড়া হয়েছে

অচেনা কবুতরদের আট বছর ধরে খাওয়ান আশরাফুল

আপডেট সময় ০৪:৪৭:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪

 

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার পৌর শহরের সবজি ব্যবসায়ী আশরাফুল (৫৫)। আট বছর আগে তাঁর দোকানের বারান্দায় এসেছিল একটি অচেনা কবুতর, কবুতরটিকে খেতে দেন তিনি। পরদিন একই সময়ে দোকানে আসে তিনটি কবুতর। তাদেরও খেতে দেন তিনি। এর পর থেকে দোকানের সামনে বারান্দায় বাড়তে থাকে কবুতরের সংখ্যা। এখন প্রতিদিন দুপুর সাড়ে ১টা বাজলেই দুই শতাধিক কবুতর এখানে এসে হাজির হয়। খাবার ছিটিয়ে দিলে তা খেয়ে আবার চলে যায়।

প্রতিদিন এমন দৃশ্য দেখা যায় আশরাফুলের দোকানের সামনে। তিনি এসব কবুতরকে প্রতিদিন নিয়ম করে দুপুরের খাবার হিসেবে গম খাওয়ান। কবুতরগুলো কোথা থেকে আসে, তা জানেন না আশরাফুল। তবে কবুতরগুলোকে খাবার দিয়ে তিনি আনন্দ পান। এসব কবুতরকে খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন তাঁকে দেড় থেকে দুই কেজি গম ছিটাতে হয়।

কবুতরগুলো টিনের চালে ঝাঁকে ঝাঁকে এলে কখনো আশরাফুল নিজে খাবার দেন। কখনো দোকানের কর্মচারী খাবার দেন। খাওয়া শেষে কবুতরগুলো চলে যায় যে যার গন্তব্যে। আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কবুতরগুলোকে এভাবে খাওয়াতে পেরে মনের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করে, নিজের মধ্যে তৃপ্তি লাগে।’

আশরাফুল জানান, সিলেটের হজরত শাহজালাল (রঃ)এর মাজারে ঝাঁকে ঝাঁকে জালালি কবুতর খাবার খায় ও উড়ে বেড়ায়। বিষয়টি দেখে তাঁর কবুতরের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। শুধু কবুতর নয়, সব জীবের প্রতি মানুষের দরদ ও ভালোবাসা দেখানো উচিত বলেও মনে করেন তিনি। কবুতর ছাড়াও একই সময়ে দোকানের টিনের চালে খাবারের জন্য আসে অচেনা ২০ থেকে ৩০টি কাক। তাদেরও নিয়ম করে খাবার হিসেবে পাউরুটির টুকরা ছিটিয়ে দেন টিনের চালে। দিনের বিভিন্ন সময় দোকানে খাবার খেতে মা-ছানাসহ আসে চারটি বিড়াল। পাশের আড়তের সবজি ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন আদর করে পুরুষ বিড়ালটির নাম রেখেছেন ‘সম্রাট’। নাম ধরে ডাকলে বিড়ালটি আশরাফুলের দোকানে ছুটে আসে খাবার খেতে। তাদের খাবার হিসেবে দেন পাশের দোকান থেকে কেনা কেক।

বিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপুল কুমার চক্রবর্তী বলেন, জীবে প্রেম তো নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় কাজ। ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম নিঃস্বার্থভাবে এতগুলো পশুপাখিকে প্রতিদিন খাবার দিচ্ছেন, সেটি প্রকৃতির প্রতি তাঁর অকৃত্রিম প্রেম। পশুপাখি থেকে কেউ কোনো স্বার্থ আশা করেন না।

সরজমিনে দুপুরের দিকে গিয়ে দেখা যায়, আশরাফুল ইসলামের দোকানঘরের টিনের চালের ওপরে জোড়ায় জোড়ায় কবুতর এসে জড়ো হচ্ছে। টিনের চালের ওপরে বিদ্যুতের তারে প‚র্ব-পশ্চিম লম্বা সারিতে বসে আছে অনেক কবুতর। বাকবাকুম, বাকবাকুম শব্দে মুখর সবজির বাজার। আশরাফুলের দোকানের এক কর্মচারী যেই না হাতে খাবারের থলে নিয়ে দোকানের বারান্দায় আসেন, তখনই কবুতরগুলো তাঁকে (কর্মচারীকে) ঘিরে উড়াউড়ি শুরু করে। খাবার ছিটিয়ে দিলে পাল্লাপাল্লি করে তা খেয়ে নেয়। তখন বাজারের অন্য দোকানি, ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ মুগ্ধ হয়ে এমন দৃশ্য উপভোগ করেন।

সবজি ব্যবসায়ী মঞ্জু রহমান বলেন, ‘আশরাফুল ভাই এলাকার একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি সারা দিন ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন। একটু গুরুগম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। তবে ব্যক্তি হিসেবে ভালো। তাঁর পরিবারে স্ত্রী, এক মেয়ে ও তিন ছেলে আছে। তিনি মামুদপুর গ্রামের মৃত ভরসা মন্ডলের ছেলে।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, আট থেকে আমি অচেনা কবুতরদের খেতে দিচ্ছি । কবুতরগুলোকে প্রতিদিন প্রায় দুই কেজি গম খেতে দেই। কাকের জন্য আলাদা বাজেট। কাকের জন্য ১০ টাকা দামের পাউরুটি ছিঁড়ে ছোট ছোট করে টিনের চালে ছিটিয়ে দেই। বিড়ালগুলোকেও খাবার দেই। এতে সব মিলে দিনে প্রায় ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং মাসে ৩ হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়।

নতুনবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাবলু বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে দেখছি, কবুতরগুলো বাইরে থেকে এখানে আসে। প্রতিদিন দুপুরে আশরাফুল কবুতরগুলোকে খাওয়ান। এটি তাঁর একটি মহৎ কাজ।’