আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে ব্যবসা বানিয়ে রেখেছে এক কথিত সাংবাদিক
রাজশাহী মহানগরীর দুর্গাপুর উপজেলা এই এক দুর্নীতির আতর ঘর। কোনভাবেই থামেনা ফসলি জমি খনন আর পুকুর সংস্কারের নামে মাটি বিক্রয়ের উৎসব। এই মাটি খাদকদের জন্য বিপদে রয়েছে স্থানীয় কৃষকগুলি । তাদের অনেক কষ্টে করা ফসলি জমি গুলোর পাশে পুকুর খনন করে চাষাবাদ অযোগ্য করে তুলছে। তারা থানায় আর উপজেলা ভূমি অফিসে অভিযোগ দিতে দিতে ক্লান্ত। দেখব ,দেখছি ,ব্যবস্থা নিচ্ছি, আপনি লিখিত অভিযোগ দেন এভাবেই দিনের পর দিন ঘুরতে থাকে এর মধ্যেই শেষ হয়ে যায় পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি।
আদালত যেখানে নিষেধ করে রেখেছেন ফসলি জমি খনন করে পুকুর করা যাবে না , পুকুর সমস্কার করলেও মাটি বিক্রয় করা যাবে না । সেই নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দুর্গাপুর উপজেলার কুরবান আলী নামের এক কথিত সাংবাদিক ব্যবসা খুলে বসেছে। তিনি সরকারি তালিকাভুক্ত কোন পত্রিকায় আছে কিনা সেটা কোনোভাবেই জানা যায় না। কিন্তু সে নাকি দুর্গাপুর উপজেলার সাংবাদিকের সভাপতি।
সরজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছে জানা যায়, কোরবান আলীর নিজের জমি নেই বা সেই কোন পুকুরের পার্টনার ও না উনি টাকার বিনিময়ে পুকুর খননের নয়তোবা পুকুর সংস্কারের নামে মাটি বিক্রয়ের দায়িত্ব নিয়ে সফলভাবে কাজটি করায়। উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), এসি ল্যান্ড ও থানা ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে ফসলি জমি হত্যার আয়োজন করে। ফসলি জমি গুলির শ্রেণী পরিবর্তন না করে সমস্ত আইন অমান্য করে পুকুর খনন আর মাটি বিক্রয় দুর্গাপুর উপজেলার একটা তুচ্ছ বিষয় হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসীর কাছে আরো জানা যায় বর্তমানে দুইটি পুকুর খননের দায়িত্বে আছে কোরবান আলী। একটি বহরমপুরে যা প্রায় এক একরের উপরে আরেকটি ভবানীপুরে। আমাদের এখনকার ইউএনও ম্যাডাম মনে হয় দুর্গাপুর কে নদী বানিয়ে ফেলবে। না আছে কৃষকদের নিয়ে চিন্তা না আছে উপজেলার রাস্তাঘাটের চিন্তা। একটু পর পর ট্রাক্টরে নইতবা ড্রাম ট্রাক ভর্তি করে মাটি নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তাঘাট অচল হয়ে পড়ছে। একটু বৃষ্টি হলেই যুবক ছেলেরা মোটরসাইকেল নিয়ে মরণ ফাঁদের মধ্যে দিয়ে যায়। মাটি নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় সেই মাটিগুলো ঝাঁকুনিতে পড়ে সমস্ত রাস্তায় কাদা হয়ে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা জিল্লুর রহমান জানায়, পুকুর খনন আর মাটি বিক্রি এটা একটা তুচ্ছ বিষয় হয়ে উঠেছে আমাদের দুর্গাপুরে। আপনারা থানায় ফোন দেন দেখেন বলবে তাদের জানা নাই । রাতে পুলিশের টহল টিমের সামনে দিয়ে একের পর এক ট্রাক যাই মাটি ভর্তি করে সেগুলি তাদের চোখেই পড়ে না। যখন ওসি কোন কথা পাবে না তখন বলে উঠবে এগুলো আমার মধ্যে নাই এগুলো দেখবে উপজেলা ভূমি অফিস তারা নির্দেশ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আপনারা একটু সামনে ঝিনার মোড়ে যেয়ে দেখুন আরেকটি পুকুর খনন চলছে সেই পুকুরের মালিক মোঃ আব্দুল রাজ্জাক। কিছুদিন আগে আমার শ্বশুর বাসার পানের বরের পাশে একটি পুকুর খনন হচ্ছিল সেটা বন্ধের জন্য আমি উপজেলা ভূমি অফিসে অনেক ঘুরেছি তবুও সেটা বন্ধ করতে পারি নাই। লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরেও আমি ব্যর্থ।
সরজমিনে দূর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন জায়গার তথ্যে জানা যায়, দুর্গাপুর উপজেলায় নতুন ও পুরাতন নিয়ে প্রায় ৪১ টি পুকুর খনন আর মাটি বিক্রয় হয়ে আসছে। যার একটিও বন্ধ করতে পারে নাই প্রশাসন । মাঝেমধ্যে কয়েকটি জায়গার ভেকুর ব্যাটারি জব্দ হলেও আবার ফেরত চলে আসে সময় মত খননের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যক্তির নিকট। প্রশাসনের নাকের ডগায় ট্রাকে করে মাটি ভর্তি নিয়ে যাচ্ছে সেটা নজরে পড়ে না এটা মানতে নারাজ দুর্গাপুরের সুশীল সমাজ।
পুকুর খননকারী কোরবান আলী জানাই, ভবানীপুরের পুকুর সম্বন্ধে আমার জানা নাই বহরমপুরের পুকুরটি আমার বাপ দাদার ভিটা সেটা আমি অনুমতি নিয়েই কাজ করছি। মাটি বিক্রির অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন সেটাও আছে এসিল্যান্ডের সাথে কথা বলেন নয়তো ইউএনও কে ফোন দেন ওনাদের জানিয়ে আমি কাজ করছি। কাগজ দেখতে চাইলে তিনি সেগুলো দেখাতে ব্যর্থ হয় আর ক্ষিপ্ত হয়ে বলে অনুমতি নেওয়া আছে তবু যদি নিউজ হয় আমি সবার নামে মামলা করে দেব।
দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)জানায়, বহরমপুরের পুকুর খননের বিষয়টি তার জানা নাই। আর এই বিষয়টি ইউএনও আর এসিল্যান্ড দেখে ওরা জানালে আমরা ব্যবস্থা নেই । আরেক গণমাধ্যম কর্মী রাতে ওসি কে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলের ব্যাপারে জানাই এবং হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও দেয় এরপরেও তিনি পরদিন বলে এই বিষয়ে তার জানা নাই।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্বীকৃতি প্রামানিক মুঠোফোনে জানায়, পুকুর সংস্কারের অনুমতি আছে কিনা দেখে জানাচ্ছি। মাটি বের করার অনুমতি এটা তো অসম্ভব কারণ রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে এবং ধুলাবালিতে পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। পরে তিনি আর অনুমতি আছে কি না জানাননি।
দুর্গাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুমন চৌধুরীকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।