ইবির কেন্দ্রীয় মসজিদের নির্মাণকাজ যেন শেষ হওয়ার নয়!!
শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়, শিক্ষার্থীরা বিদায় নেয়। প্রধান প্রকৌশলী, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি এমনকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের নির্মাণকাজ যেন কখনো শেষ হওয়ার নয়। ১৯৯৪ সালে শুরু হওয়া কেন্দ্রীয় মসজিদের কাজ ২০২৪ সালে এসেও আটকে রয়েছে প্রজেক্ট পাশ আর দাপ্তরিক ফাইলে।
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নির্মাণশৈলীর দিক থেকে সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা এবং মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় উপাসনালয়টি নির্মাণাধীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এমন অসম্পূর্ণ নির্মাণকাজ শেষ হবে কবে তা জানেনা খোদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গই। তিন দশকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র কেন্দ্রীয় মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্মাণকাজ শুরুর ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের কাজ ধাপে ধাপে এখন অব্দি ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ১৯৯৪ সালে সরকারি অর্থায়নে শুরু হলেও পরবর্তীতে বৈদেশিক সহায়তা নিয়ে নির্মাণকাজ আগাতে থাকে। মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ভিন্ন খাতে ব্যয় ও সঠিকভাবে কাজে না লাগানোর অভিযোগে বিদেশি প্রতিষ্ঠান অর্থ ফেরত নিলে নির্মাণ কাজ থমকে যায়। পরে ২০০৮ সালে ২৬ আগষ্ট খুলনা সার্কিট হাউজে তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে গৃহীত প্যাকেজ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ইবিতে ২২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় যার ১৭ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় মসজিদের অবশিষ্ট নির্মাণকাজে ব্যায়ের কথা ছিল। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আলাউদ্দিন ২০০৯ সালে মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো অর্থ বরাদ্দের অনুমোদনপত্রে স্বাক্ষর করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি অংশ মসজিদের বরাদ্দকৃত টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করার লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন মহলে জোর তৎপরতা চালালে প্রশাসনের সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে সে টাকা মন্ত্রনালয়ে ফেরত যায়।
সরজমিনে দেখা যায়, মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ পার্শ্বের প্রবেশ ব্যবস্থা থাকলেও কোন ফটক নেই। নিচতলায় একাধিক তালাবদ্ধ কক্ষ, ফাঁকা স্থানে মরা ডালপালা, দুটি কক্ষে আনসার সদস্যদের আবাসন, অফিস সহায়ক সমিতির নাম সম্বলিত অফিস কক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, ইমামের কক্ষ ও একটি অজুখানা দেখা যায়। নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি পর্যন্ত টাইলস বাঁধাই থাকলেও দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলার সিঁড়িতে নেই কোন টাইলসের অস্তিত্ব। অরক্ষিত নিরাপত্তা বলয়ে ২০২২ সালের ৮ জুন রাতে মসজিদের কাচ ভেঙে ৪টি বড় স্ট্যান্ড ফ্যান চুরির ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও ফ্যান ও সাউন্ড সিস্টেম সংকট, ভেতরে মাদুর থাকলেও বাহিরে না থাকা, জুতা/স্যান্ডেল রাখার ব্যবস্থাহীনতাসহ জুম্মার দিনে অধিক মুসল্লির আগমনে চাপ সামলাতে ব্যর্থ অজুখানায় দিতে হয় লম্বা লাইন। বাজে সাউন্ড সিস্টেম, দুর্বল যন্ত্রপাতি লাগানো ও দেয়ালে লোনা ধরার কারণে এখনই রং চটে যাচ্ছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এর সৌন্দর্য। মসজিদের ভিতরের গায়ে বাদুর ও মাকড়শা জাল বাসা বুনেছে। মসজিদের গ্রিল, জানালার গায়ে ধরেছে মরিচা। নিয়মিত পরিস্কার করা হয়না মসজিদের আশপাশের ঝোপ-জঙ্গল।
তবে, মসজিদের কাজ শুরুর পর নানা কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও তিন ধাপে অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। ২০০৪ সালে ৩৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলে সর্বশেষ ২০১৭ সালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর সময় দুই ধাপে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদটির ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। নির্মাণকাজ শেষে দেশের প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সর্ববৃহৎ মসজিদ হবে ইবির এই কেন্দ্রীয় মসজিদটি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমাংশে ২.২৫ হেক্টর জায়গা জুড়ে মসজিদের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। মসজিদের গ্রাউন্ড ফ্লোরের আয়তন ৫১ হাজার বর্গফুট। চারতলা বিশিষ্ট মসজিদের মূল অংশে মোট সাত হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবে। এছাড়া মসজিদের সামনের অংশের বারান্দায় আরো ১০ হাজার মুস্ললি নামাজ পড়তে পারবে।
তিন দশকেও নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। তারা বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে সৌন্দর্যের স্থানটি হলো এই মসজিদ তবে দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ হচ্ছে না এর। এটা দুঃখজনক।
ক্ষোভের প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী নাফিজ আহমেদ বলেন, এতো বছরেও প্রশাসন মসজিদের কাজ শেষ করতে পারেনি। ক্যাম্পাসের অন্যতম স্থাপনা এই মসজিদ। এর কাজ অতি দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন।
অসমাপ্ত কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ.কে.এম শরীফ উদ্দীন বলেন, এটি আমাদের অনেক বড় প্রকল্প। উপমহাদেশের বেশকিছু মসজিদের সাথে এটি সমাপ্ত হবে। অনেক বড় প্রকল্প হওয়ার ঠিকমতো বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কাজে দেরী হচ্ছে।
বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বাহির থেকে কোন বরাদ্দ আসছে কি না এই ব্যাপারে আমার জানা নেই। আমি দায়িত্বে আসার পর দেখছি পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নেই হচ্ছে এই প্রকল্পটি। আর ডিজাইন যেটা করা হয়েছে সেটা কমপ্লিট হবে। নিচতলা বেশকিছু অফিসের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। সম্পন্ন হওয়ার পর প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবে কি করবে সেখানে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূইয়া বলেন, এখন কোনো প্রজেক্ট নেই। আমরা প্রজেক্ট পাশের চেষ্টা করছি। পাশ হলে মসজিদের কাজ নতুন করে শুরু করা হবে।