ইবির খালেদা জিয়া হলের নতুন আতঙ্কের নাম ‘শর্ট সার্কিট’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসিক হল খালেদা জিয়া হলের নতুন আতঙ্কের নাম শর্ট সার্কিট। কয়দিন পরপরই বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগা, রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসা যেন এখন খালেদা জিয়া হলের নিয়মিত ঘটনা। ফলে রীতিমতো জীবনের ভয় নিয়ে সময় পার করছেন হলে অবস্থানরত আবাসিক ছাত্রীরা।প্রশ্ন উঠেছে হলের পুরাতন ব্লকটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হবে নাকি সংস্কার করে পুনর্বাসন করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খালেদা জিয়া হলের পুরোনো ব্লকে প্রায়ই ছোট-বড় বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনা ঘটে। গত জুলাই মাসেও সেখানে শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটে। সেসময় হলের তিনতলা পর্যন্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ মেরামত করার কথা থাকলেও দুই তলা পর্যন্ত করা হয়।এর আগে হলের বৈদ্যুতিক সংস্কার খাতে ২ লক্ষ টাকার সংস্কার কাজ করা হলেও মেলেনি সুরাহা মেলেনি। উল্টো রয়েছে গোঁজামিল দিয়ে কাজ করে বিল উত্তোলনের অভিযোগ। একাধিকবার ছাত্রীরা হল অফিসে সংস্কার কাজের বিবরণ দেখতে চাইলেও তাদের দেখানো হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের হলে প্রায়দিনই শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটছে। এর আগে ঈদের ছুটির পর আগুন লাগলেও প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়া প্রতিদিন প্রশাসনের কাছে যাওয়া হলেও তাদের কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। এতগুলো মেয়ে থাকে যদি কারো কিছু হয়ে যায় তাহলে এর দায়ভার কে নিবে? শিক্ষার্থীদের দাবি, যতদিন পর্যন্ত এই বৈদ্যুতিক সমস্যার সমাধান না হবে ততদিন তাদের জন্য ডরমিটরিতে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। বৈদ্যুতিক ত্রুটি যুক্ত এমন একটি হলে অবস্থানের কারণে জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত ১১ টায় আবারো শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলে। ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে হলটি। এসময় আতঙ্কিত হয়ে জ্ঞান হারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী রুনা লায়লা। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
এবিষয়ে কর্মরত ডাক্তার মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই হলে এমন শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। আতঙ্কিত হয়ে প্যানিক অ্যাটাক হয়েছিলো। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার তাকে হলে পাঠিয়েছি। এখন আপাতত শঙ্কার কিছু নেই।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী কে. এম শরীফ উদ্দীন বলেন, খালেদা জিয়া হলে আমাদের সার্বক্ষণিক ইলেক্ট্রিশিয়ান নিয়োজিত ছিলো। গতকাল মেয়েরা হঠাৎ হট্টগোল করলে ইলেক্ট্রিশিয়ান পুরো ৫ তলা বিল্ডিং খোঁজাখুঁজি করে কোথাও কোনো সমস্যা বের করতে পারেনি। আতঙ্কিত হয়ে মেয়েরাই সার্কিট ব্রেকার অফ করে দিয়েছিলো। আসলে এইটা অনেক পুরোনো একটি হল। এখানে যে সমস্যা হচ্ছে তার সমাধানের জন্য নতুন করে পুরো বিল্ডিং আবার ওয়্যারিং করতে হবে। তবে সাময়িক সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সার্বক্ষণিক একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান হলে রাখা আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী বলেন, গতকাল রাত্রের ঘটনাটি আমি অবগত। আমাদের একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান ওখানে ছিলো এবং হাউজ টিউটর উপস্থিত ছিলো। তবে কোনো ত্রুটি খোঁজে পাওয়া যায়নি। ভয়ের থেকে মেয়েরা অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো।
নতুন করে বৈদ্যুতিক লাইনের ওয়্যারিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, প্রকৌশল অফিস একাজে ৪৮ লক্ষ টাকা লাগবে বলে জানিয়েছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে, আগামী শনিবারের আগে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। তবে আমি হাউজ টিউটর, ডিনস কমিটি, চীফ ইঞ্জিনিয়ার এবং নিয়োজিত ইলেক্ট্রিশিয়ানের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। যেকোন সমস্যা হলে সাথে সাথে যেনো সমাধান করা যায়।
নারী শিক্ষার্থীদেরকে ডরমিটরিতে স্থানান্তর করা যায় কি না – এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ডরমিটরিতে যে কয়টা রুম রয়েছে তাতে হয়তো ৪০-৫০ জন মেয়েকে আমরা জায়গা দিতে পারবো। সেখানকার সকল মেয়েকে এখানে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। আমরা আলোচনা করছি কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। আগামী কার্যদিবসে আশাকরি সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।