ঢাকা ০৩:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইবির চারুকলার শিক্ষার্থীদের রঙ তুলির আঁচড়ে রঙিন ইন্দ্রপুরী

ওয়াসিফ আল আবরার, ইবি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের রংতুলির আঁচড়ে রঙিন যৌবনে প্রবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী ত্রিবেণী বাজারের ভ্যানচালক ইন্দ্রজিৎ সাহার মাটির বাড়ি। বিলুপ্তপ্রায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য সেই মাটির বাড়িটির প্রতিটি দেয়ালে এখন শোভা পাচ্ছে বিভিন্নরকম আলপনা, গ্রাফিতি ও প্রতিকৃতির শিল্পকর্ম।

সরজমিনে দেখা যায়, ভ্যানচালক ইন্দ্রজিতের বাড়ির ৮টি দেয়ালের উপরে চলেছে চারুকলা বিভাগের রঙযোদ্ধাদের শিল্পকর্ম। কয়েকটি দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের আলপনা। বাড়ির দরজা জানালা গুলো সাজানো হয়েছে অন্যরকম ডিজাইনে। একটি বাড়ির সদর দেয়ালে দেখা যাচ্ছে হিন্দু ধর্মের শ্রীকৃষ্ণ এবং দেবীর প্রতিকৃতি। পাশাপাশি অন্যান্য দেয়াল সাজানো হয়েছে মাছ, পালকি, গ্রামীণ বধু এবং হরেকরকম গ্রাফিতি দিয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চারুকলা বিভাগের সিনিয়র জুনিয়র শিক্ষার্থীদের চায়ের আড্ডায় হুট করেই প্ল্যান হয় ইন্দ্রজিৎ সাহার বাড়িতে আলপনা করার। ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সুদিপ রয়, মিষ্টি, হিমিকা, ২১-২২ সেশনের সজল, প্রমি, নুসরাত ঐশি, নেহা ও ২২-২৩ সেশনের প্রনয় অন্ত, মাহমুদ নাহিন, শাহেদ বিশ্বাস, অর্ক, জুবায়ের, দীনবন্ধু রায় দেবা, প্রাপ্তি, যুক্তা জ্যোতি, সুমি, শিমু , কবিতা, তাসনিম সহ আরো অনেকে মিলে হাতখরচের টাকা জমিয়ে নিজ অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন অবকাশ শুরু হওয়ার পরেরদিন নেমে পড়ে বাড়িটি রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলতে। সকাল ৭ টা থেকে কাজ শুরু করে সন্ধ্যার আগে দিয়ে শেষ হয় তাদের এই কর্মযজ্ঞ।

কর্মযজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকা সুদিপ রায় বলেন, ইবির চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রং তুলি হাতে একটা ছোট্ট যুদ্ধ ছিলো এটি। ভিন্নধর্মী কিছু করার ইচ্ছা থেকেই এই শিল্পকর্ম করা হয় যা আমাদের জুনিয়রদের সাথে পরবর্তীতে বড় পরিসরে কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে। বাড়িটিতে রঙ তুলির আঁচড় ফুটিয়ে তুলতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে।

২১-২২ সেশনের সজল বলেন, কিছুদিন আগে চারুকলা বিভাগের কয়েকজন মিলে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের প্রোগ্রাম এর সমস্ত সাজ ও আল্পনার কাজ করি। সেখান থেকে মনে হলো অল্প কয়জনেই এত কাজ করলে, আরো কিছু শিক্ষার্থী যুক্ত হলে আরো অনেক কাজ করতে পারবো। বিষয়টি সিনিয়র জুনিয়রদের জানালে সাথে সাথেই সবাই কাজ করতে রাজি হয়ে যায়। এরপর প্রয়োজনীয় রঙ, তুলি, মগ ইত্যাদি সরঞ্জামের বন্দবস্ত করে কাজে লেগে যাই। দিনব্যাপী শ্রমের মাধ্যমে সুন্দর কারুকার্য সম্পন্ন হয়েছে।

২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী প্রণয় বলেন, হঠাৎ গল্পে গল্পেই এমন একটি কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আমরাও অনেক আগ্রহী ছিলাম। অতঃপর দিনক্ষণ ঠিক করে সকালে কাজ শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করি৷ এই কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে আমরা এক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করি। একই সাথে চারুকলা বিভাগের ভাই আপুদের একত্বতাবোধ এবং উদ্যোমী আত্মবিশ্বাস এর সাথে পরিচিত হই। ভবিষ্যতেও এধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চাই।

ভ্যানচালক ইন্দ্রজিৎ বলেন, অনেকদিন থেকেই ছেলে-পেলেদের সাথে আমার চেনাজানা। কয়দিন আগে বললো যে আমার বাড়িতে ওরা আকাআকি করবে। ত আমিও রাজি হয়ে যাই। পরে ওরা এসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে আমার বাড়ির দেয়াল সাজিয়ে দেয়। নিজের বাড়ির দেয়ালে এত সুন্দর শিল্পকর্ম দেখে নিজের মধ্যেই ভালো লাগে কাজ করছে। সাজানো দেখে বাড়ির বাচ্চারাও খুব খুশি। আশপাশের সবাইও খুব প্রশংসা করতেছে। অনেকেই আমার বাড়ি দেখতে আসতেছে, এটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:৩১:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩
২৬৩ বার পড়া হয়েছে

ইবির চারুকলার শিক্ষার্থীদের রঙ তুলির আঁচড়ে রঙিন ইন্দ্রপুরী

আপডেট সময় ০৮:৩১:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের রংতুলির আঁচড়ে রঙিন যৌবনে প্রবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী ত্রিবেণী বাজারের ভ্যানচালক ইন্দ্রজিৎ সাহার মাটির বাড়ি। বিলুপ্তপ্রায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য সেই মাটির বাড়িটির প্রতিটি দেয়ালে এখন শোভা পাচ্ছে বিভিন্নরকম আলপনা, গ্রাফিতি ও প্রতিকৃতির শিল্পকর্ম।

সরজমিনে দেখা যায়, ভ্যানচালক ইন্দ্রজিতের বাড়ির ৮টি দেয়ালের উপরে চলেছে চারুকলা বিভাগের রঙযোদ্ধাদের শিল্পকর্ম। কয়েকটি দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের আলপনা। বাড়ির দরজা জানালা গুলো সাজানো হয়েছে অন্যরকম ডিজাইনে। একটি বাড়ির সদর দেয়ালে দেখা যাচ্ছে হিন্দু ধর্মের শ্রীকৃষ্ণ এবং দেবীর প্রতিকৃতি। পাশাপাশি অন্যান্য দেয়াল সাজানো হয়েছে মাছ, পালকি, গ্রামীণ বধু এবং হরেকরকম গ্রাফিতি দিয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চারুকলা বিভাগের সিনিয়র জুনিয়র শিক্ষার্থীদের চায়ের আড্ডায় হুট করেই প্ল্যান হয় ইন্দ্রজিৎ সাহার বাড়িতে আলপনা করার। ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সুদিপ রয়, মিষ্টি, হিমিকা, ২১-২২ সেশনের সজল, প্রমি, নুসরাত ঐশি, নেহা ও ২২-২৩ সেশনের প্রনয় অন্ত, মাহমুদ নাহিন, শাহেদ বিশ্বাস, অর্ক, জুবায়ের, দীনবন্ধু রায় দেবা, প্রাপ্তি, যুক্তা জ্যোতি, সুমি, শিমু , কবিতা, তাসনিম সহ আরো অনেকে মিলে হাতখরচের টাকা জমিয়ে নিজ অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন অবকাশ শুরু হওয়ার পরেরদিন নেমে পড়ে বাড়িটি রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলতে। সকাল ৭ টা থেকে কাজ শুরু করে সন্ধ্যার আগে দিয়ে শেষ হয় তাদের এই কর্মযজ্ঞ।

কর্মযজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকা সুদিপ রায় বলেন, ইবির চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রং তুলি হাতে একটা ছোট্ট যুদ্ধ ছিলো এটি। ভিন্নধর্মী কিছু করার ইচ্ছা থেকেই এই শিল্পকর্ম করা হয় যা আমাদের জুনিয়রদের সাথে পরবর্তীতে বড় পরিসরে কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে। বাড়িটিতে রঙ তুলির আঁচড় ফুটিয়ে তুলতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে।

২১-২২ সেশনের সজল বলেন, কিছুদিন আগে চারুকলা বিভাগের কয়েকজন মিলে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের প্রোগ্রাম এর সমস্ত সাজ ও আল্পনার কাজ করি। সেখান থেকে মনে হলো অল্প কয়জনেই এত কাজ করলে, আরো কিছু শিক্ষার্থী যুক্ত হলে আরো অনেক কাজ করতে পারবো। বিষয়টি সিনিয়র জুনিয়রদের জানালে সাথে সাথেই সবাই কাজ করতে রাজি হয়ে যায়। এরপর প্রয়োজনীয় রঙ, তুলি, মগ ইত্যাদি সরঞ্জামের বন্দবস্ত করে কাজে লেগে যাই। দিনব্যাপী শ্রমের মাধ্যমে সুন্দর কারুকার্য সম্পন্ন হয়েছে।

২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী প্রণয় বলেন, হঠাৎ গল্পে গল্পেই এমন একটি কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আমরাও অনেক আগ্রহী ছিলাম। অতঃপর দিনক্ষণ ঠিক করে সকালে কাজ শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করি৷ এই কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে আমরা এক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করি। একই সাথে চারুকলা বিভাগের ভাই আপুদের একত্বতাবোধ এবং উদ্যোমী আত্মবিশ্বাস এর সাথে পরিচিত হই। ভবিষ্যতেও এধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চাই।

ভ্যানচালক ইন্দ্রজিৎ বলেন, অনেকদিন থেকেই ছেলে-পেলেদের সাথে আমার চেনাজানা। কয়দিন আগে বললো যে আমার বাড়িতে ওরা আকাআকি করবে। ত আমিও রাজি হয়ে যাই। পরে ওরা এসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে আমার বাড়ির দেয়াল সাজিয়ে দেয়। নিজের বাড়ির দেয়ালে এত সুন্দর শিল্পকর্ম দেখে নিজের মধ্যেই ভালো লাগে কাজ করছে। সাজানো দেখে বাড়ির বাচ্চারাও খুব খুশি। আশপাশের সবাইও খুব প্রশংসা করতেছে। অনেকেই আমার বাড়ি দেখতে আসতেছে, এটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগে।