ইবি উপাচার্যের নেতিবাচক কর্মকান্ডে বিব্রত শাপলা ফোরাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের গত দু’বছরের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে বিব্রত বোধ করছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন ‘শাপলা ফোরাম।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১ টার দিকে অনুষদ ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে ইবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাথে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন্তব্য করেছেন শাপলা ফোরামের নেতারা। এছাড়াও ২৬২ তম সিন্ডিকেট সভায় কোন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান ছাড়াই ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ মোঃ বখতিয়ার হাসানকে পদ অবনমন করে প্রভাষক করা হয়েছে বলে দাবি শাপলা ফোরামের।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রবিউল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী সেন, কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরীন, অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার সহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ এবং ইবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান রাকিব, সাধারণ সম্পাদক তাসনিমুল হাসান প্রান্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান সিদ্দিকী, প্রচার সম্পাদক ফারহানা নওশীন তিতলি সহ অন্যান্য সাংবাদিকবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, আপনারা জানেন যে, ২০২২ সাল থেকে মাননীয় উপাচার্যের কণ্ঠসদৃশ বেশ কিছু দুর্নীতির অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে তাঁর এধরনের অডিও ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারের ফলে শিক্ষক সমাজ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন শাপলা ফোরামের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শাপলা ফোরামের সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের আলোকে মাননীয় উপাচার্যকে এবিষয়ে তাঁর অবস্থান পরিষ্কারের জন্য লিখিতভাবে অনুরোধ জানান। কিন্তু অদ্যাবধি তিনি এবিষয়ে কিছু না জানানোয় শাপলা ফোরাম সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইউজিসি ইতোমধ্যে এবিষয়ে তদন্ত শুরু করেছেন যা চলমান আছে।
নেতারা আরো বলেন, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়ার অস্বচ্ছতার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় উক্ত বোর্ডের একজন নিয়োগ প্রার্থী সংক্ষুদ্ধ হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করলে কমিশন অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে যা এখনো চলমান। দুদক ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ প্রদানের পরপরই মাননীয় উপাচার্য ওই বিভাগের তৎকালীন সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ বোর্ডে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে একটি এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। বিভাগের তৎকালীন সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসান তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিত মিথ্যা অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে শাপলা ফোরাম বরাবর আবেদন করেন যার প্রেক্ষিতে শাপলা ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটি একাধিকবার মাননীয় উপাচার্য ও প্রশাসনের নিকট সম্মানজনক সমাধানের আহ্বান জানান। শাপলা ফোরামের সকল আহবান উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ড. বখতিয়ার হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করলে বখতিয়ার হাসান সর্বশেষ উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেন এবং আদালত এটিকে স্থগিত করেন। উক্ত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি যখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন, এবং দুদকের তদন্ত কার্যক্রম চলমান ঠিক তখনই উপাচার্য তাঁর আস্থাভাজন একটি তদন্ত কমিটির রিপোর্টের মাধ্যমে গত ১২ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত ২৬২ তম সিন্ডিকেট সভায় কোন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান ছাড়াই ড. মোঃ বখতিয়ার হাসানকে পদ অবনমন করেন।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে ভীতি ছড়ানোর অভিযোগ করে নেতারা বলেন, উপাচার্য এধরনের কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের তদন্ত কার্যক্রমকে ভিন্নখাতে চালানোর চেষ্টা করছেন অন্যদিকে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে সামনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা করছেন। ইতোমধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১মবর্ষ ভর্তি সংক্রান্ত শিক্ষক সমিতি ও একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে বুদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি তাঁর একনায়কতন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমি যতদূর জানি তদন্ত কমিটি তাদের ডেকেছিলো। বিষয়টি তদন্ত কমিটির সদস্যরাই ভালো বলতে পারবে। তবে তারপরও যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। তবে যাবতীয় সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতেই নেওয়া হয়েছে।