ঈদের ছুটিতে বাড়িতে ফিরছেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা
মাহে রমজান, ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ সহ আজ থেকে মোট ১৬ দিনের জন্য ছুটিতে যাচ্ছে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ছুটি শুরু হওয়ায় হল ছাড়তে শুরু করছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জীবনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে অনেক শিক্ষার্থী।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই বছরের বেশিরভাগ সময়ই পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের থেকে দূরে থাকতে হয়। সারা বছর সেমিস্টার পরীক্ষা, ক্লাস টেস্ট, ল্যাব, অ্যাসাইনমেন্ট, টিউশনসহ নানা ব্যস্ততার কারণে হর-হামেশাই বাড়ি ফেরা হয়ে ওঠে না। বছর ঘিরে যখন ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটি মেলে, শিক্ষার্থীরা এই ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ফিরে যায় তাদের বাড়িতে। এত ব্যস্ততার মাঝে পরিবারকে একটু সময় দেয়ার জন্য, বন্ধুদের সাথে মেতে ওঠার জন্য। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ঈদকে ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা অন্যদের চেয়ে বেশিই থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, দোলনচাঁপা হল ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলসহ ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হলগুলোর সামনে দাঁড়ালেই এখন ব্যাগ-বস্তা ও বিভিন্ন মালপত্র চোখে পড়ছে। বিশেষত সকাল ও সন্ধ্যা সময় এ দৃশ্যটা বেশি দেখা যাচ্ছে। হলগুলো থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে দেখা যাচ্ছে বাড়ি ফেরার আনন্দের ঝিলিক। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সঙ্গে দেখা হওয়ার উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ছে তাদের কথাবার্তাতেও।
ঈদে বাড়ি যাওয়ার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রুকাইয়া হাসান রাকা জানায়,
ঈদ মানেই পরিবারের সকলের সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠা। যার যেমন সার্মথ্য আছে তা দিয়েই পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করা। ছোট থেকে ঈদ আমার কাছে অনেক প্রতীক্ষার একটি দিন। ক্যাম্পাস লাইফ শুরু হওয়ার পর থেকে এ প্রতীক্ষা আরও বেশি। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের আনন্দ দ্বিগুণ বেশি। কারণ এ ঈদেই আমরা শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ছুটি পাই।
রোজা আসার পর থেকে সকলের মাঝে বাড়ি যাওয়ার আমেজ শুরু হয়। বাড়ির কাছেই বিশ্ববিদ্যালয়। তাই ঈদে ক্যাম্পাস ত্যাগের সেই আনন্দ না পেলেও বন্ধু-বান্ধবের বাড়ি ফেরার আনন্দমাখা চোখ দেখতেই ভালো লাগে। শিহরণ জাগে। তবে সকলেই তার সুখের নীড়ে ফিরতে পারে না। নানান কারণে কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের হলেই থেকে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ঈদের দিনটি আনন্দমুখোর করার জন্য প্রতি হলে খাবারের ব্যবস্থা করে। রাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে ঈদ নামাজের আয়োজন করা হয়। তারা এ সামান্য আয়োজনের মধ্যেই ঈদ আনন্দ খুঁজে নেয়। আর আমিও সুযোগ পেলে তাদের সঙ্গে যোগদান করি।
আমার ঈদ শুরু হয় চাঁদরাত থেকেই। বড় হওয়ার পর থেকে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে পুরো শহর ঘুরে বেড়াই, নিজের জমানো টাকা দিয়ে পরিবারের সকলের জন্য কিছু উপহার নেই। ঈদের সকাল শুরু হয় খুব ভোরে মায়ের সঙ্গে রান্না করার মধ্যে দিয়ে। তারপর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করা, বন্ধুদের সঙ্গে বিকেলে ঘুরতে যাওয়া। বড় হওয়ার পর থেকে সালামি না পেলেও দায়িত্ব করে সকলকে সালামি দিতে হয়। আমার ঈদ মানেই পরিবারের সঙ্গে অনেক আনন্দ করা। সকলের ঈদ তার পরিবারের সঙ্গে আনন্দময় হোক এ কামনায় করি।
১৭ তম ব্যাচের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহামুদুল হাসান জানান, রমজানে পরিবারের সাথে বসে ইফতার করার মাহাত্ম্য যে কতটা সেটা উপলব্ধি করা যায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। রমজান আসলেই অপেক্ষায় থাকি কবে ছুটি হবে, কবে বাড়ি যাব আর কবে পরিবারের কাছের মানুষদের সাথে বসে ইফতার করব। ঈদের আনন্দ সবার সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি। এ যেন ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। ঈদ উদযাপনে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়াটা যেন ঈদের আগে আরেক ঈদ।