ঢাকা ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাবিতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণে ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৪, ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন

আনোয়ার সুলতান, সাভার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এঘটনায় আরও দুইজন পলাতক রয়েছে।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২ টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) আব্দুল্লাহিল কাফি। এর আগে শনিবার গভীর রাতে সাভার-আশুলিয়া থানার যৌথ অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- (১) ফরিদপুর জেলার ভাঙা থানার বালিয়া হাটি গ্রামের মজিবর রহমান খানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। (২) বগুড়া জেলার শেরপুর থানার পারভবানিপুর গ্রামের মৃত ফজলুল হক সরকারের ছেলে সাব্বির হাসান সাগর। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। (৩) কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানার নেওয়াশী গ্রামের মোঃ মফিজুল হক সিদ্দিকে ছেলে সাগর সিদ্দিক ও (৪) রংপুর জেলার কতোয়ালী সদর থানার গন্দাদাশ গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে হাসানুজ্জামান।

 

এ ঘটনায় পলাতক আসামীরা হলেন- (১) নওগাঁ জেলার পত্নীতলা থানার আমন্ত গ্রামের মোঃ হাসির উদ্দিনের ছেলে মোঃ মামুসুর রহমান মামুন ও (২) মোঃ মুরাদ।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ভুক্তভোগীর স্বামী রাতেই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা সাভার ও আশুলিয়া থানা সম্বনয় হয়ে একাধিক টিম গঠন করে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। মামলায় মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদকে ধর্ষনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাকি চারজনের বিরুদ্ধে মারধর ও আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ভুক্তভোগীকে তার স্বাস্থ্য পরিক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আসামী মামুসুর রশিদ মামুনের সাথে ভুক্তোভুগীর স্বামীর পূর্ব পরিচিত ছিলো। সেই সুবাদে মামুন তার বাসায় কিছুদিন থাকতে চায়। পরে আসামী মামুন ভুক্তোভুগীর বাসায় যায়। এরপর ১০/১২ দিন ভুক্তোভুগীর বাসায় থাকে মামুন। পরে গতকাল বিকেল চারটায় ভুক্তোভুগীর স্বামী মোঃ জাহিদ মিয়াকে ফোন করে জাহাঙ্গীরনগর আসতে বলে। পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর মীর মোশারফ হলের সামনে গেলে তাকে ৩১৭ রুমে আসতে বলে। এসময় আসামী মামুন তার বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান ও মুরাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে মামুনের জিনিসপত্র জাহিদের বাসায় থাকায় তার স্ত্রীকে ফোন করে নিয়ে আসতে বলে।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, আসামী মোস্তাফিজুর রহমান, মামুন ও মুরাদসহ মীর মোশারফ হলের সামনে চয়ের দোকানে অপেক্ষা করেন। রাত নয়টার দিকে ভুক্তোভুগী জাহাঙ্গীরনগর ডেইরী গেইট আসলে এসময় মামুন তাকে চায়ের দোকানে নিয়ে আসতে বলে। এরপর তাকে নিয়ে আসলে মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুন মুরাদের সাথে যেতে বলে। এসময় মুরাদের সাথে চলে গেলে জাহিদের স্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুনের সাথে চায়ের দোকনে থাকে। পরে জাহিদ রুমে ঢুকা মাত্রই মুরাদ তাকে মারধর করে তার মোবাইল ফোন নিয়ে তাকে রুমের মধ্যেই আটকে রাখে। এর এক ঘন্টাপর আসামী মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুন রুমে ঢুকে তাকে ছেড়ে দেয় আর বলে জাহিদের স্ত্রীকে গাড়িতে করে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। পরে জাহিদ সেই চায়ের দোকানে তার স্ত্রীকে দেখতে পেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করা মাত্র তাকে ধর্ষণের বিষয়টি জানান। এরপর আসামী মোস্তাফিজুর, মামুন ও মুরাদের কাছে জানতে চাইলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে রাতেই আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে ভুক্তোভুগীর স্বামী জাহিদ মিয়া।

অভিযোগের পর গতকাল গভীর রাতেই ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আজ দুপুরে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার আদালতে পাঠায় পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে  ৯ টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৌশলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামি মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদ মামুন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৬:৫৭:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
৮১ বার পড়া হয়েছে

জাবিতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণে ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৪, ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন

আপডেট সময় ০৬:৫৭:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এঘটনায় আরও দুইজন পলাতক রয়েছে।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২ টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) আব্দুল্লাহিল কাফি। এর আগে শনিবার গভীর রাতে সাভার-আশুলিয়া থানার যৌথ অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- (১) ফরিদপুর জেলার ভাঙা থানার বালিয়া হাটি গ্রামের মজিবর রহমান খানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। (২) বগুড়া জেলার শেরপুর থানার পারভবানিপুর গ্রামের মৃত ফজলুল হক সরকারের ছেলে সাব্বির হাসান সাগর। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। (৩) কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানার নেওয়াশী গ্রামের মোঃ মফিজুল হক সিদ্দিকে ছেলে সাগর সিদ্দিক ও (৪) রংপুর জেলার কতোয়ালী সদর থানার গন্দাদাশ গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে হাসানুজ্জামান।

 

এ ঘটনায় পলাতক আসামীরা হলেন- (১) নওগাঁ জেলার পত্নীতলা থানার আমন্ত গ্রামের মোঃ হাসির উদ্দিনের ছেলে মোঃ মামুসুর রহমান মামুন ও (২) মোঃ মুরাদ।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ভুক্তভোগীর স্বামী রাতেই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা সাভার ও আশুলিয়া থানা সম্বনয় হয়ে একাধিক টিম গঠন করে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। মামলায় মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদকে ধর্ষনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাকি চারজনের বিরুদ্ধে মারধর ও আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ভুক্তভোগীকে তার স্বাস্থ্য পরিক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আসামী মামুসুর রশিদ মামুনের সাথে ভুক্তোভুগীর স্বামীর পূর্ব পরিচিত ছিলো। সেই সুবাদে মামুন তার বাসায় কিছুদিন থাকতে চায়। পরে আসামী মামুন ভুক্তোভুগীর বাসায় যায়। এরপর ১০/১২ দিন ভুক্তোভুগীর বাসায় থাকে মামুন। পরে গতকাল বিকেল চারটায় ভুক্তোভুগীর স্বামী মোঃ জাহিদ মিয়াকে ফোন করে জাহাঙ্গীরনগর আসতে বলে। পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর মীর মোশারফ হলের সামনে গেলে তাকে ৩১৭ রুমে আসতে বলে। এসময় আসামী মামুন তার বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান ও মুরাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে মামুনের জিনিসপত্র জাহিদের বাসায় থাকায় তার স্ত্রীকে ফোন করে নিয়ে আসতে বলে।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, আসামী মোস্তাফিজুর রহমান, মামুন ও মুরাদসহ মীর মোশারফ হলের সামনে চয়ের দোকানে অপেক্ষা করেন। রাত নয়টার দিকে ভুক্তোভুগী জাহাঙ্গীরনগর ডেইরী গেইট আসলে এসময় মামুন তাকে চায়ের দোকানে নিয়ে আসতে বলে। এরপর তাকে নিয়ে আসলে মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুন মুরাদের সাথে যেতে বলে। এসময় মুরাদের সাথে চলে গেলে জাহিদের স্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুনের সাথে চায়ের দোকনে থাকে। পরে জাহিদ রুমে ঢুকা মাত্রই মুরাদ তাকে মারধর করে তার মোবাইল ফোন নিয়ে তাকে রুমের মধ্যেই আটকে রাখে। এর এক ঘন্টাপর আসামী মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুন রুমে ঢুকে তাকে ছেড়ে দেয় আর বলে জাহিদের স্ত্রীকে গাড়িতে করে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। পরে জাহিদ সেই চায়ের দোকানে তার স্ত্রীকে দেখতে পেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করা মাত্র তাকে ধর্ষণের বিষয়টি জানান। এরপর আসামী মোস্তাফিজুর, মামুন ও মুরাদের কাছে জানতে চাইলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে রাতেই আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে ভুক্তোভুগীর স্বামী জাহিদ মিয়া।

অভিযোগের পর গতকাল গভীর রাতেই ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আজ দুপুরে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার আদালতে পাঠায় পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে  ৯ টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৌশলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামি মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদ মামুন।