জাবি শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে রাবিতে মানববন্ধন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী গ্রাফিতি আঁকার জেরে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রাজাশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি ফলকের সামনে মানববন্ধন করে রাবি শাখার প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো।
মানববন্ধে ‘অমর্ত্য-ঋদ্ধ বহিষ্কার কেন?’, ‘নীতিবহির্ভূত বহিষ্কারাদেশ বাতিল কর’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত কর’, ‘আজ্ঞাবহ প্রশাসন চাই না’,
‘অমর্ত্য রায় বহিষ্কার কেন?’, ‘অমর্ত্য-ঋদ্ধের বহিষ্কার আদেশ বাতিল কর’, ‘ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বহিষ্কার কেন?’, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই’ ইত্যাদি সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মানবন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান দোষে গুনে মানুষ। তার যে ভালো দিক গুলো আছে আমরা তা স্বীকার করি। কিন্তু তার যদি সমালোচনা করার কিছু দিক থাকে তা করার আমাদের অধিকার আছে। বর্তমানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে তাকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মনে হয় তিনি একজন ঈশ্বর তার কোন সমালোচনা করা যাবে না। যার মাধ্যমে দেশে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে মানুষের প্রতিবাদ করার যে মেরুদন্ড তা ভেঙে দেয়া হচ্ছে। চার বছর আগের মুজিব শতবর্ষের গ্রাফিতি মুছে নতুন করে ধর্ষনের প্রতিবাদে গ্রাফিতি আঁকায় আমাদের দুইজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহবায়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি পরিমান আজ্ঞাবহ হলে তড়িৎ গতিতে কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দুইজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে। তারা দুজনেই ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের যত অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খল ও ধর্ষণ এসবের বিরুদ্ধে তারা কথা বলে। সেজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের তাদের উপর ক্ষোভ আছে, সেই সূত্র ধরেই তাদেরকে এই দায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়াল লিখন, এটা একদল লিখে অন্য দল সেটা মুছে ফেলে এটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ছাত্ররা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা কাল্টে পরিণত করেছে। এবং এই কাল্ট মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে , যাতে কেউ কথা না বলতে পারে। কন্ঠ রোধ করার জন্য যেই ব্যবস্থা, সেটা এই রাষ্ট্র ও এই বিশ্ববিদ্যালয় করে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ভালো মন্দ বোঝে না, তারা বোঝে কিভাবে শুধু লুটপাট করতে হয়।
এ সময় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এমন জায়গায় দাড়িয়েছে যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। আছে শুধু দলীয় আনুগত্য করার স্বাধীনতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে । বৃদ্ধি পাচ্ছে দলীয় আনুগত্য করার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং প্রো- ভিসি ২১শে ফেব্রুয়ারী ছাত্রলীগের ফুলের ঢালা নিয়ে শহীদ মিনারে যায়। এটা কেমন সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের ঢালা হাতে দাড়িয়ে থাকে। আমরা এ ধরণের স্বাধীনতা চাই না। আমরা চাই সাম্যের স্বাধীনতা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করলে হলে সিট বাণিজ্য করা যায়। অবৈধভাবে হলে অবস্থান করা যায়। শিক্ষার্থীদের কন্ঠরোধ করলে এটা বিস্ফোরণে পরিণত হবে। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে শীঘ্রই তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে।
মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতন্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবি ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র যুব গণমঞ্চ, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের দেয়ালে ধর্ষণবিরোধী দেয়ালচিত্র আঁকায় ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।