ঢাকা ০১:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুদকের মামলায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ

নিজস্ব সংবাদ

জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রতারণা, জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে কনিষ্ঠ শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু সাঈদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।এসময় সাতক্ষীরা বিশেষ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক, জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মো. আব্দুল আলীম আল রাজী শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ৩০ অক্টোবর এ মামলার অপর তিন আসামি সাতক্ষীরা সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এসএম আবু রায়হান, দর্শন বিভাগের প্রভাষক নাসির আহম্মেদ এবং হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক অরুণ কুমার সরকারকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন আদালত।  
 
দুদকের প্যানেল আইনজনীবী অ্যাডভোকেট সাধন চক্রবর্তী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে চার প্রভাষককে এমপিওভুক্ত করার মাধ্যমে ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাস ২০২২ সালের ৯ মার্চ খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি (৩/২০২২) দায়ের করেন। যা পরে সাতক্ষীরা বিশেষ আদালতে ২/২০২২ নম্বর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের খুলনা অফিসের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় চলতি বছরের ৫ মে আদালতে মামলার পাঁচ আসামির নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ২৬ অক্টোবর দুদকের অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত আসামিদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।  

অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে রেজুলেশন জালিয়াতি করে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে ২৪ জন শিক্ষক নিয়োগ ও ২১ জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট তদন্ত শুরু করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাস। ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর সাবেক অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুকুমার দাসের কাছ থেকে দুদক সাতক্ষীরা সিটি কলেজের দুর্নীতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারে। অভিযুক্ত ২১ জন প্রভাষক ও অধ্যক্ষ আবু সাঈদকে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েক দফায় দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নেওয়া হয় তাদের লিখিত জবানবন্দি। পরে বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মনিরুল ইসলাম, দর্শন বিভাগের প্রভাষক নাসির আহম্মেদ, ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এসএম আবু রায়হান এবং হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অরুণ কুমার সরকারের কাগজপত্র জাল বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়।

২০১৯ সালের ২৪ জুলাই দুদকের হটলাইনে সিটি কলেজের এমপিও বঞ্চিত এবং কলেজ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিতাড়িত বিধান চন্দ্র দাসসহ অন্যদের অভিযোগের পর ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারির পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকদের তদন্ত কর্মকর্তার মুখোমুখি হতে হয়।  

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ব্যান বেইসের তথ্য অনুসারে মো. মনিরুল ইসলামের প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর। এসএম আবু রায়হানের যোগদানের তারিখ ২০০৫ সালের ১৭ মার্চ। মো. নাসির আহম্মেদের প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০১৬ সালের পহেলা ডিসেম্বর ও অরুণ কুমার সরকারের যোগদানের তারিখ ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। তাদের যোগাদানের তারিখ জালিয়াতি করে মনিরুল ইসলাম ও অরুণ কুমার সরকারের যোগদান ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর, এসমএম আবু রায়হান ও নাসির আহম্মেদের যোগদান দেখানো হয়েছে ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর।

অধ্যক্ষ আবু সাঈদের যোগসাজশে ওই চারজন শিক্ষক ২০১৯ সালের পহেলা ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট পর্যন্ত বেতন ভাতা বাবদ ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা রূপালী ব্যাংক সাতক্ষীরা কর্পোরেট শাখা থেকে তুলে আত্মসাৎ করেন।

সূত্রটি আরও জানায়, বর্তমানে আরও ১২ জন শিক্ষকের তথ্য জালিয়াতি করে এমপিওযোগ্য নামের তালিকাভুক্ত করার অভিযোগে ২০২৩ সালের ১০ জুলাই থেকে ১২ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানী কর্মকর্তা তাদের ডেকে নিয়োগ সংক্রান্ত সব তথ্য উপাত্ত রেকর্ড করেন। এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আজিম খান শুভসহ চারজনের নামে দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা ও বেতন ভাতা নেওয়ার পরিমান জানতে চাওয়া হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিয়ন, নাইট গার্ড থেকে শুরু করে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ১০ লাখ টাকা থেকে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ভাগবাটোয়ারার এক অলিখিত সিস্টেম গড়ে উঠেছে। আর এ সিস্টেমের কারণে বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকরি করে বহু ননএমপিওভুক্ত শিক্ষক এমপিওভুক্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে পথে বসেছেন। সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই ধারা অব্যাহত রয়েছে।  

সোর্স- বা.নি

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০১:৫৯:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩
২৭৮ বার পড়া হয়েছে

দুদকের মামলায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ

আপডেট সময় ০১:৫৯:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩

জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রতারণা, জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে কনিষ্ঠ শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু সাঈদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।এসময় সাতক্ষীরা বিশেষ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক, জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মো. আব্দুল আলীম আল রাজী শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ৩০ অক্টোবর এ মামলার অপর তিন আসামি সাতক্ষীরা সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এসএম আবু রায়হান, দর্শন বিভাগের প্রভাষক নাসির আহম্মেদ এবং হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক অরুণ কুমার সরকারকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন আদালত।  
 
দুদকের প্যানেল আইনজনীবী অ্যাডভোকেট সাধন চক্রবর্তী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে চার প্রভাষককে এমপিওভুক্ত করার মাধ্যমে ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাস ২০২২ সালের ৯ মার্চ খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি (৩/২০২২) দায়ের করেন। যা পরে সাতক্ষীরা বিশেষ আদালতে ২/২০২২ নম্বর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের খুলনা অফিসের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় চলতি বছরের ৫ মে আদালতে মামলার পাঁচ আসামির নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ২৬ অক্টোবর দুদকের অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত আসামিদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।  

অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে রেজুলেশন জালিয়াতি করে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে ২৪ জন শিক্ষক নিয়োগ ও ২১ জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট তদন্ত শুরু করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাস। ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর সাবেক অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুকুমার দাসের কাছ থেকে দুদক সাতক্ষীরা সিটি কলেজের দুর্নীতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারে। অভিযুক্ত ২১ জন প্রভাষক ও অধ্যক্ষ আবু সাঈদকে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েক দফায় দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নেওয়া হয় তাদের লিখিত জবানবন্দি। পরে বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মনিরুল ইসলাম, দর্শন বিভাগের প্রভাষক নাসির আহম্মেদ, ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এসএম আবু রায়হান এবং হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অরুণ কুমার সরকারের কাগজপত্র জাল বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়।

২০১৯ সালের ২৪ জুলাই দুদকের হটলাইনে সিটি কলেজের এমপিও বঞ্চিত এবং কলেজ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিতাড়িত বিধান চন্দ্র দাসসহ অন্যদের অভিযোগের পর ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারির পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকদের তদন্ত কর্মকর্তার মুখোমুখি হতে হয়।  

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ব্যান বেইসের তথ্য অনুসারে মো. মনিরুল ইসলামের প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর। এসএম আবু রায়হানের যোগদানের তারিখ ২০০৫ সালের ১৭ মার্চ। মো. নাসির আহম্মেদের প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০১৬ সালের পহেলা ডিসেম্বর ও অরুণ কুমার সরকারের যোগদানের তারিখ ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। তাদের যোগাদানের তারিখ জালিয়াতি করে মনিরুল ইসলাম ও অরুণ কুমার সরকারের যোগদান ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর, এসমএম আবু রায়হান ও নাসির আহম্মেদের যোগদান দেখানো হয়েছে ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর।

অধ্যক্ষ আবু সাঈদের যোগসাজশে ওই চারজন শিক্ষক ২০১৯ সালের পহেলা ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট পর্যন্ত বেতন ভাতা বাবদ ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা রূপালী ব্যাংক সাতক্ষীরা কর্পোরেট শাখা থেকে তুলে আত্মসাৎ করেন।

সূত্রটি আরও জানায়, বর্তমানে আরও ১২ জন শিক্ষকের তথ্য জালিয়াতি করে এমপিওযোগ্য নামের তালিকাভুক্ত করার অভিযোগে ২০২৩ সালের ১০ জুলাই থেকে ১২ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানী কর্মকর্তা তাদের ডেকে নিয়োগ সংক্রান্ত সব তথ্য উপাত্ত রেকর্ড করেন। এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আজিম খান শুভসহ চারজনের নামে দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা ও বেতন ভাতা নেওয়ার পরিমান জানতে চাওয়া হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিয়ন, নাইট গার্ড থেকে শুরু করে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ১০ লাখ টাকা থেকে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ভাগবাটোয়ারার এক অলিখিত সিস্টেম গড়ে উঠেছে। আর এ সিস্টেমের কারণে বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকরি করে বহু ননএমপিওভুক্ত শিক্ষক এমপিওভুক্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে পথে বসেছেন। সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই ধারা অব্যাহত রয়েছে।  

সোর্স- বা.নি