ঢাকা ১০:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে আমরা সফল হয়েছি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব সংবাদ

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনে সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সফল হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলার আরো উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম তার মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

উপদেষ্টা বলেন, পুলিশকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সাড়ে তিন হাজার কনস্টেবল ও এক হাজার দুইশ সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগের পাশাপাশি ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বদলিসহ বাহিনীতে বড় রদবদল করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীতে আরও জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুলিশের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার ৪২ জন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে এবং গত তিন মাসে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক থেকে কনস্টেবল পদে ১ হাজার ৩৩০ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন।]

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগ ও বদলি করা হয়েছে। এটা করতে গিয়ে কোনো তদবির কিংবা অনিয়ম হয়নি। বদলি, পদায়ন ও নিয়োগ কেন্দ্র করে কোনো প্রকার লেনদেন হয়নি। এটাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্য।’

সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে পুলিশকে, কোনো ব্যক্তি সে যেই হোক না কেন  তার কোনো বেআইনি আদেশ পালন না করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্বল্পতম সময়ে সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোকে সফলভাবে পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর হতাশ হয়ে পড়া পুলিশ সদস্যদের মানসিকভাবে শক্তিশালী ও সক্রিয় করেছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করছে।

এ ছাড়া দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তার জন্য সেনা, নৌ ও বিমান এই তিন বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

শান্তিপূর্ণভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়াকে একটি সাফল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়া আমাদের বড় সাফল্য।’

বাসসের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আলাপকালে নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে তাদের সাফল্য সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর পুলিশ তাদের দায়িত্বে অনুপস্থিত ছিল এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা আইনশৃঙ্খলাকে সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছি।’

তিনি বলেন, ২০২৩ এবং ২৪ সালের অক্টোবর মাসের পরিসংখ্যান তুলনা করলে দেখা যাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। কারণ খুন, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তাদের পাঁচ লাখ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হবে– ওই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, দল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এমন কথাও কেউ বলতে পারবে না।

চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশকে যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও মাদকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তবে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যাবে না বলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার আদেশ পুনর্ব্যক্ত করেন।

‘পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পরে হয়রানির মামলায় গ্রেপ্তার করা উচিত’ বলে পুনরুল্লেখ করেন তিনি।

একইসঙ্গে অন্যায় ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও জনগণের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না– তাও নিশ্চিত করতে বলেন তিনি।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০২:৪৪:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
৫৬ বার পড়া হয়েছে

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে আমরা সফল হয়েছি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেট সময় ০২:৪৪:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনে সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সফল হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলার আরো উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম তার মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

উপদেষ্টা বলেন, পুলিশকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সাড়ে তিন হাজার কনস্টেবল ও এক হাজার দুইশ সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগের পাশাপাশি ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বদলিসহ বাহিনীতে বড় রদবদল করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীতে আরও জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুলিশের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার ৪২ জন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে এবং গত তিন মাসে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক থেকে কনস্টেবল পদে ১ হাজার ৩৩০ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন।]

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগ ও বদলি করা হয়েছে। এটা করতে গিয়ে কোনো তদবির কিংবা অনিয়ম হয়নি। বদলি, পদায়ন ও নিয়োগ কেন্দ্র করে কোনো প্রকার লেনদেন হয়নি। এটাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্য।’

সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে পুলিশকে, কোনো ব্যক্তি সে যেই হোক না কেন  তার কোনো বেআইনি আদেশ পালন না করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্বল্পতম সময়ে সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোকে সফলভাবে পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর হতাশ হয়ে পড়া পুলিশ সদস্যদের মানসিকভাবে শক্তিশালী ও সক্রিয় করেছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করছে।

এ ছাড়া দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তার জন্য সেনা, নৌ ও বিমান এই তিন বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

শান্তিপূর্ণভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়াকে একটি সাফল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়া আমাদের বড় সাফল্য।’

বাসসের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আলাপকালে নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে তাদের সাফল্য সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর পুলিশ তাদের দায়িত্বে অনুপস্থিত ছিল এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা আইনশৃঙ্খলাকে সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছি।’

তিনি বলেন, ২০২৩ এবং ২৪ সালের অক্টোবর মাসের পরিসংখ্যান তুলনা করলে দেখা যাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। কারণ খুন, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তাদের পাঁচ লাখ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হবে– ওই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, দল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এমন কথাও কেউ বলতে পারবে না।

চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশকে যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও মাদকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তবে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যাবে না বলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার আদেশ পুনর্ব্যক্ত করেন।

‘পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পরে হয়রানির মামলায় গ্রেপ্তার করা উচিত’ বলে পুনরুল্লেখ করেন তিনি।

একইসঙ্গে অন্যায় ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও জনগণের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না– তাও নিশ্চিত করতে বলেন তিনি।