প্রকাশ্যে নৌকা-সতন্ত্র দ্বন্দ্ব! তৃণমূল ভাগ হবার শঙ্কা
৭ই জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতিমধ্যে নির্বাচনী আমেজ জমে উঠেছে। প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনী সভা, মিছিল-মিটিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা৷
গত ৩০ নভেম্বর ছিলো মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ৷ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ৩ হাজার ৩৬২ জনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিপরীতে ২৯৮ প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করে। এরই মধ্যে ১৪ দলের শরিকদের ৬ টি আসন (ওয়ারকাস পার্টি- ২, জাসদ-৩, জিপি-১) এবং জাতীয় পার্টি কে ২৬টিসহ মোট ৩২ টি আসন ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন বয়কট করেছে৷ আওয়ামী লীগ থেকে বারবার আমন্ত্রণ করা হলেও নির্বাচনে আসার কোন সাড়া দেয়নি বিএনপি।
এবারে নির্বাচনে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের নজর থাকবে বাংলাদেশের নির্বাচনের উপর। ইতিমধ্যে বহির্বিশ্বের বেশ কিছু সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদনও জানিয়েছে। এক কথায় বলা যায় এবারের নির্বাচন হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসির) বেশ কিছু দীর্ঘ বক্তব্যও রয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক রাখতে ভোটার এবং ভোটকেন্দ্র নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সুশৃংখল ও তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাঃ
নির্বাচনী আমেজ ওসব মুখর করতে ও ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে দলের মনোনীত (নৌকা) প্রার্থীর বাইরেও দলের ভেতর থেকেও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন দলের হেভিওয়েট নেতারা। স্থানীয় রাজনীতি ও জনপ্রিয়তায় শতাধিক আসনগুলোতে নৌকার বিপরীতে হেবিওয়েট প্রার্থীরা নৌকার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছে মনোনয়ন বঞ্চিত ২৬ এমপি, সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতারা।
মাঠের রাজনীতিঃ
জন লিলি (John Lily) তার একটি গ্রন্থে লিখেছিলেন “ভালোবাসা ও যুদ্ধে সবই বৈধ” (everything is fair in love and war) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঠিক তেমনটাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা এবং নৌকার বিপরীতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অবস্থান ঠিক তেমনি। এখানে যেন সবকিছুই বৈধ। নির্বাচন ঘিরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলের মনোনীত নৌকার প্রার্থী ও দলের-ই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মাঝে নানান অপ্রতিকর ঘটনা দেখা গিয়েছে। এ সংঘাতে যুদ্ধের ন্যায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ঘটনাও ঘটেছে। মাঠে লড়াইয়ে কেউ হারার জন্য আসে না। আসলে প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়ে কেউ ছাড় দেওয়ার মনোভাব নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ও না। বরং এমনটা না হলেই অস্বাভাবিক মনে হয়। কোন আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর হচ্ছে আবার কোথাও বা আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিস ভাঙ্গা হচ্ছে। ভোট যুদ্ধ ও সমর্থনে এগিয়ে থাকতে একে অপরের দোষ গুণও বিচার করছেন। এতে তৃণমূল ও মাঠ পর্যায়ের সক্রিয় নেতা কর্মীরা বিভক্ত হচ্ছেন এবং চিহ্নিত হচ্ছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন প্রতিপক্ষঃ
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার মাঝিদের প্রতিদ্বন্দিতা করছেন আওয়ামী লীগেরই প্রভাবশালী ও স্থানীয় জনপ্রিয় নেতারা। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শক্ত প্রতিপক্ষও হয়ে উঠছেন তারা। দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরেও সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ থাকলেও অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে বার বার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষ নেতারা এ নিয়ে নির্দেশনা দিলেও মাঠের রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে প্রকাশ্যে বাকদন্দ্ব। এ দ্বন্দ্ব ৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে দলকেই ভাবতে হবে। দল এ দ্বন্দ রুখতে ব্যর্থ হলে শক্ত সংঘাতেও রূপ নিতে পারে। তৃণমূলে দেখা দিতে পারে ফাটল। প্রকাশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে এই বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক, এরমধ্যে রয়েছে হেভিওয়েট প্রার্থীদের ইগো, সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা।