ঢাকা ০৩:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রশাসনের পদত্যাগের হিড়িকে গতিহীন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ওয়াসিফ আল আবরার, ইবি

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শীর্ষ ৩ পদ এবং প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টার স্ব স্ব দায়িত্ব থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করার পর গতিহীন হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসের শিক্ষা-কার্যক্রম সহ যাবতীয় অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ না থাকায় ব্যহত হচ্ছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজকর্ম। অভিভাবক শূন্য ইবিতে তৈরী হয়েছে নানা সংকট।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া গত ০৮ আগষ্ট রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। এছাড়াও ১৭ আগষ্ট ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বরাবর প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ ও ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ পদত্যাগপত্র জমা দেন। ইতোমধ্যেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন।

এদিকে, উপাচার্য না থাকায় সিন্ডিকেট সভা ব্যতিত শুরু করা যাচ্ছে না ক্লাস পরিক্ষা। অন্যদিকে কোষাধ্যক্ষ না থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সংক্রান্ত কার্যক্রম। এছাড়াও, প্রক্টরের পদত্যাগের পরে ভেঙে পড়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব নিয়ে হল পাহারায় রাখলেও ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের উৎপাত চরমে ঠেকেছে। উপ-উপাচার্য ও ছাত্রউপদেষ্টা না থাকায় তৈরী হয়েছে নানা প্রশাসনিক সংকট। একাডেমিক কার্যক্রম একেবারে স্থগিত ও প্রশাসনিক কাজকর্ম চলছে একেবারে ঢিলেঢালা গতিতে।

শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকদের পেনশন সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম বাতিল ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার ক্লাস পরিক্ষা। এতে ইতোমধ্যে বিরাজমান সেশনজট আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টা পদত্যাগ করায় নিরাপত্তা শঙ্কাও রয়েছে। সর্বোপরি আমাদের মূল অভিভাবক ‘ভিসি স্যার’ পদ শূন্য থাকায় এমন যাবতীয় সংকটের উদ্ভব। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা দ্রুত স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যেতে চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মো: নওয়াব আলী বলেন, সংস্থা প্রধান হিসেবে উপাচার্য না থাকায় উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। ফাইল জমা হচ্ছে কিন্তু ফাইল ছাড় হচ্ছে না।

অর্থ ও হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব পরিচালক শেখ মো: জাকির হোসেন বলেন, ‘দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের অনুমোদন নিতে পারছি না। বিভিন্ন বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সংকট। আশা করছি দ্রুত ভিসি নিয়োগের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান হবে।’

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক সুইট বলেন, ‘উপাচার্য নেই, যার ফলে শিক্ষার পরিবেশ ও পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আগে বিভিন্ন বিভাগে সেশন জট ছিল যা বৃদ্ধি পেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারে প্রভাব পড়তে পারে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রক্টর স্যার পদত্যাগ করেছেন। তখন থেকেই আমরা আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেছি। আমরা চাই অতিদ্রুত নতুন প্রক্টর এসে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করুক।

এবিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এ. কে. এম. মতিনুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম নিয়ে আমাদের ডিনদের নিয়ে মিটিং কল করেছিলাম। কিন্তু মাত্র দুইজন ডিন উপস্থিত হওয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি নি। আমরা চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৬:২৭:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
৬২ বার পড়া হয়েছে

প্রশাসনের পদত্যাগের হিড়িকে গতিহীন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট সময় ০৬:২৭:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শীর্ষ ৩ পদ এবং প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টার স্ব স্ব দায়িত্ব থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করার পর গতিহীন হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসের শিক্ষা-কার্যক্রম সহ যাবতীয় অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ না থাকায় ব্যহত হচ্ছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজকর্ম। অভিভাবক শূন্য ইবিতে তৈরী হয়েছে নানা সংকট।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া গত ০৮ আগষ্ট রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। এছাড়াও ১৭ আগষ্ট ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বরাবর প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ ও ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ পদত্যাগপত্র জমা দেন। ইতোমধ্যেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন।

এদিকে, উপাচার্য না থাকায় সিন্ডিকেট সভা ব্যতিত শুরু করা যাচ্ছে না ক্লাস পরিক্ষা। অন্যদিকে কোষাধ্যক্ষ না থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সংক্রান্ত কার্যক্রম। এছাড়াও, প্রক্টরের পদত্যাগের পরে ভেঙে পড়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব নিয়ে হল পাহারায় রাখলেও ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের উৎপাত চরমে ঠেকেছে। উপ-উপাচার্য ও ছাত্রউপদেষ্টা না থাকায় তৈরী হয়েছে নানা প্রশাসনিক সংকট। একাডেমিক কার্যক্রম একেবারে স্থগিত ও প্রশাসনিক কাজকর্ম চলছে একেবারে ঢিলেঢালা গতিতে।

শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকদের পেনশন সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম বাতিল ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার ক্লাস পরিক্ষা। এতে ইতোমধ্যে বিরাজমান সেশনজট আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টা পদত্যাগ করায় নিরাপত্তা শঙ্কাও রয়েছে। সর্বোপরি আমাদের মূল অভিভাবক ‘ভিসি স্যার’ পদ শূন্য থাকায় এমন যাবতীয় সংকটের উদ্ভব। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা দ্রুত স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যেতে চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মো: নওয়াব আলী বলেন, সংস্থা প্রধান হিসেবে উপাচার্য না থাকায় উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। ফাইল জমা হচ্ছে কিন্তু ফাইল ছাড় হচ্ছে না।

অর্থ ও হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব পরিচালক শেখ মো: জাকির হোসেন বলেন, ‘দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের অনুমোদন নিতে পারছি না। বিভিন্ন বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সংকট। আশা করছি দ্রুত ভিসি নিয়োগের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান হবে।’

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক সুইট বলেন, ‘উপাচার্য নেই, যার ফলে শিক্ষার পরিবেশ ও পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আগে বিভিন্ন বিভাগে সেশন জট ছিল যা বৃদ্ধি পেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারে প্রভাব পড়তে পারে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রক্টর স্যার পদত্যাগ করেছেন। তখন থেকেই আমরা আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেছি। আমরা চাই অতিদ্রুত নতুন প্রক্টর এসে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করুক।

এবিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এ. কে. এম. মতিনুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম নিয়ে আমাদের ডিনদের নিয়ে মিটিং কল করেছিলাম। কিন্তু মাত্র দুইজন ডিন উপস্থিত হওয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি নি। আমরা চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।