হরতাল-অবরোধে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সেবায় পরিবর্তন
কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়: সারাদেশে চলছে বিএনপি, জামায়াত ডাকা নবম দফার হরতাল। দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসে বাসে আগুনও দিয়েছে দুর্বৃত্তরা বলে জানা যায়। একের পর এক ডাকা বিএনপি’র হরতাল অবরোধে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্দশাগ্রস্ত হলেও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আছে প্রভাব শূন্য, বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবির। স্বাভাবিকভাবেই চলছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস পরিক্ষা। তবে অবরোধের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থার উপর। ক্লাস পরিক্ষাসহ সকল কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হলেও রদবদল হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত বাসের রুট ও স্টপেজে।
বিরোধী দলের ঘোষিত অবরোধ ও হরতালের দিনগুলোতে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লগোসমৃদ্ধ শিক্ষার্থী বাস ও শিক্ষকদের মাইক্রো ও মিনি বাসগুলো। তার পরিবর্তে শিক্ষার্থী পরিবহনে শুধুমাত্র যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা বিআরটিসি বাসের বহর। ক্যাম্পাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচলের রুট ঢাকা বাইপাস থেকে ব্রীজ দিয়ে সড়ক ও জনপদ অফিস পর্যন্ত এবং শহরের ভেতর দিয়ে চরপাড়া হয়ে সড়ক ও জনপদ অফিস পর্যন্ত হলেও হরতালের দিনে পুরোপুরিই বন্ধ থেকে বাস চলাচলের এ রুটগুলো। পরিবর্তে শুধুমাত্র মাসকান্দা বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত গিয়েই থেমে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা এ বিআরটিসি’র বাসগুলো। এখানেই শুরু হয় জনজীবনের দূ্র্গতি ও ভোগান্তি।
টাউন হল বিশ্ববিদ্যালয় বাসের স্টপেজ থাকায় ময়মনসিংহে অবস্থানরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী থাকার জন্য টাইনহল সংলগ্ন এলাকাগুলোকেই বেঁছে নেয় তবে হরতালের দিনে যেখান থেকে মাসকান্দা বাস স্ট্যাণ্ডের যাতায়াত মূল্য প্রায় ৭০-৮০ টাকা। এবং পুনরায় ফেরার পথে একই পরিমান অর্থ গুণতে হলে এ খরচ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় দেড়শত টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া ব্রীজ হয়ে টাউন হলের রুটেও কোনো পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের জনজীবনও হয়ে পড়ে সংকটাপন্ন। শহর থেকে ক্যাম্পাসের বাস ছাড়ার নির্ধারিত সময়েরও প্রায় ৩০-৪০ মিনিট আগে তাদের রওনা দিতে হয় শুধুমাত্র ক্যাম্পাসের বাসই ধরার জন্য মাসকান্দা বাস স্ট্যাণ্ডের উদ্দেশ্যে।
হরতালের দিনে ক্যাম্পাসের লগো সমৃদ্ধ বাস বন্ধের পক্ষে পরিবহন নিরাপত্তার কথাটি মাথায় রাখা হলেও একই সময়ে বিআরটিসি বাসে করে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলীকে যাতায়াত করতে হচ্ছে একই রুটে। যেখানে পরিবহন নিরাপত্তা হুমকিস্বরূপ হলে হুমকিতে পতিত হবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের মূল্যবান জনজীবনও। হরতালের দিনে পরিবহন ব্যবস্থাকে নিরাপত্তা দিলেও ক্লাস পরিক্ষা খোলা রেখে শিক্ষার্থী বা শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলীর জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টির প্রশ্ন সেখানে থেকেই যায়।
হরতাল এর দিনে বাস বিড়ম্বনা নিয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এর কয়েকজন শিক্ষার্থী এর সাথে কথা বলে জানা যায় যে তারা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।এই নিয়ে আইন ও বিচার বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী আকিফুর রহমান আরিয়ান জানান “হরতাল এর দিনে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস মাসকান্দা পর্যন্ত যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। যাতায়াতের সমস্যা হয় কারন অধিকাংশ শিক্ষার্থী এর বাসা টাউনের দিকে এবং মাসকান্দা পর্যন্ত আসার ভাড়া প্রয়োজনের তুলনায়ও বেশি লাগে হরতালের দিনে। সকলের অর্থনৈতিক অবস্থা একরকম নয় তাই বাস টাউন থেকে ছাড়া হলে আমাদের ভোগান্তি কমে যাবে।
” আরেক শিক্ষার্থী প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেন, ” হরতাল/অবরোধের দিনে যদি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিবিএমসিবি এর বাস টাউনের ভিতর দিয়ে চলতে পারে তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস কেনো চলতে পারে না?
” বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের এক অধ্যাপক জানান, “দেশের ৩য় গ্রেডের একজন নাগরিক হিসেবে তার পক্ষে সাধারণ শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ বিআরটিসি বাস মাধ্যমে ক্যাম্পাসে যাওয়া অনেকটাই দৃষ্টিকটু। দুইদিনে সিএনজিযোগে ক্যাম্পাস গিয়ে আসতে তার খরচ হয়েছে ১হাজার টাকারও বেশি। দ্রুত এ অবস্থার সমাধানে আসা উচিত।
” এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক ড. মো. আরিফুর রহমান বলেন, “হরতালের বিগত দিনগুলোতেও একই নিয়ম বাসগুলো পরিচালিত হয়েছে এবং পরিচালনা কমিটির বাকি সদস্যদের অনুমতি ব্যতিত আমি তা পরিবর্তন করতে পারবো না।”