ঢাকা ১২:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মায়ের কোলে চড়ে ভর্তিযুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন মীমের

ওয়াসিফ আল আবরার, ইবি

 

মেয়েটির নাম মাহফুজা আক্তার মীম। বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশায়। দুই ভাইবোনের সংসারে বড় মেয়ে সে। তার বাবা মঞ্জু হোসেন পেশায় ফার্নিচার মিস্ত্রী, আর মা সাহেরা বেগম গৃহিণী। জন্ম থেকেই হাটতে না পারা মীম শুক্রবার (৩ মে) গুচ্ছভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মায়ের কোলে চড়েই আসে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে।

হাতের সমস্যা থাকার কারণে ধীরে ধীরে লিখতে হয় মীমকে। হাটা চলা করতে না পারা মীম মায়ের কোলে চড়েই পাড়ি দিয়েছেন শিক্ষাজীবনের দুই তৃতীয়াংশ। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধেও ভালো ফলাফলের আশা মীমের।

বাহাদুরপুর পন্ডিত কাজী আবুল হোসেন কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। মায়ের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মীমকে দমাতে পারেনি কেউ। ছোটবেলায় স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে শিকার হতে হয়েছে নানা বাঁধার। তবে নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে স্কুল কলেজ জয় করে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হওয়ার অপেক্ষা তার।

পরীক্ষা শেষে কথা হয় মীমের সাথে। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ পরীক্ষা ভালো হয়েছে। জন্ম থেকে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, আমার লেখাপড়ার পুরোটা সময়েই আম্মু পাশে ছিলো, আমার এ পর্যন্ত শিক্ষাজীবন সম্পন্ন হয়েছে আম্মুর কোলে বসেই। ছোটোবেলায় আমি যখন স্কুলে ভর্তি হতে যাই সাধারণ বাচ্চাদের মতো আমাকে ভর্তি নিতে চায়নি। স্কুল থেকে বলা হয়েছিলো আমি হয়তো পড়তে পারবো না, অন্য বাচ্চাদের সমস্যা হবে। আম্মুর অনুরোধে শিক্ষকরা আমাকে ভর্তি নেয়। ভর্তি নিলেও আমার রোল নির্ধারণ হয় সবার পরে। পরবর্তীতে বার্ষিক পরীক্ষার পর যখন আমি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করি তখন শিক্ষকরা আমাকে নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর থেকে নিজের চেষ্টায় ভালো ফলাফল ধরে রেখেছি। আজ জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিয়েছি ।

পরীক্ষা সম্পর্কে মীম বলেন, প্রশ্ন তুলনামূলক সহজ ছিলো, তবে আমার হাতে সমস্যা থাকার কারণে আমি এক্সট্রা সময় পাইনি। আমার খাতাই আগে নিয়েছে বরং।

মীমের মা সাহেরা বেগম বলেন, কোন মা যেন তার সন্তানকে না বলে যে আমার সন্তান পড়তে চায় না। সকল পিতা মাতার উদ্দেশ্যে বলবো, আমি আমার অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে এতো দূর আসতে পারলে আপনি আপনার সুস্থ সন্তানকে নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবেন। শিক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই, আমি বিশ্বাস করি আমার মেয়ে যদি শিক্ষিত হয় আমি মারা গেলে আমার মেয়ে তার বাবার বোঝা হবেনা। সেজন্য আমি এতোদূর তাকে এনেছি।

তার মা আরও বলেন, ওর জন্মের পর থেকেই ওর বাবা আমাকে সাপোর্ট করেছে। আমার আরেকটা ছোট ছেলে রয়েছে। তবে আমার স্বপ্ন আমার বড় মেয়ে মীমকে ঘিরেই। আমি চাই আমার মেয়ে একটা সরকারি চাকরি করুক, নিজের পায়ে দাঁড়াক, সমাজের বোঝা না হোক।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৬:৩৮:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪
১০৫ বার পড়া হয়েছে

মায়ের কোলে চড়ে ভর্তিযুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন মীমের

আপডেট সময় ০৬:৩৮:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

 

মেয়েটির নাম মাহফুজা আক্তার মীম। বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশায়। দুই ভাইবোনের সংসারে বড় মেয়ে সে। তার বাবা মঞ্জু হোসেন পেশায় ফার্নিচার মিস্ত্রী, আর মা সাহেরা বেগম গৃহিণী। জন্ম থেকেই হাটতে না পারা মীম শুক্রবার (৩ মে) গুচ্ছভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মায়ের কোলে চড়েই আসে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে।

হাতের সমস্যা থাকার কারণে ধীরে ধীরে লিখতে হয় মীমকে। হাটা চলা করতে না পারা মীম মায়ের কোলে চড়েই পাড়ি দিয়েছেন শিক্ষাজীবনের দুই তৃতীয়াংশ। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধেও ভালো ফলাফলের আশা মীমের।

বাহাদুরপুর পন্ডিত কাজী আবুল হোসেন কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। মায়ের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মীমকে দমাতে পারেনি কেউ। ছোটবেলায় স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে শিকার হতে হয়েছে নানা বাঁধার। তবে নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে স্কুল কলেজ জয় করে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হওয়ার অপেক্ষা তার।

পরীক্ষা শেষে কথা হয় মীমের সাথে। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ পরীক্ষা ভালো হয়েছে। জন্ম থেকে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, আমার লেখাপড়ার পুরোটা সময়েই আম্মু পাশে ছিলো, আমার এ পর্যন্ত শিক্ষাজীবন সম্পন্ন হয়েছে আম্মুর কোলে বসেই। ছোটোবেলায় আমি যখন স্কুলে ভর্তি হতে যাই সাধারণ বাচ্চাদের মতো আমাকে ভর্তি নিতে চায়নি। স্কুল থেকে বলা হয়েছিলো আমি হয়তো পড়তে পারবো না, অন্য বাচ্চাদের সমস্যা হবে। আম্মুর অনুরোধে শিক্ষকরা আমাকে ভর্তি নেয়। ভর্তি নিলেও আমার রোল নির্ধারণ হয় সবার পরে। পরবর্তীতে বার্ষিক পরীক্ষার পর যখন আমি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করি তখন শিক্ষকরা আমাকে নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর থেকে নিজের চেষ্টায় ভালো ফলাফল ধরে রেখেছি। আজ জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিয়েছি ।

পরীক্ষা সম্পর্কে মীম বলেন, প্রশ্ন তুলনামূলক সহজ ছিলো, তবে আমার হাতে সমস্যা থাকার কারণে আমি এক্সট্রা সময় পাইনি। আমার খাতাই আগে নিয়েছে বরং।

মীমের মা সাহেরা বেগম বলেন, কোন মা যেন তার সন্তানকে না বলে যে আমার সন্তান পড়তে চায় না। সকল পিতা মাতার উদ্দেশ্যে বলবো, আমি আমার অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে এতো দূর আসতে পারলে আপনি আপনার সুস্থ সন্তানকে নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবেন। শিক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই, আমি বিশ্বাস করি আমার মেয়ে যদি শিক্ষিত হয় আমি মারা গেলে আমার মেয়ে তার বাবার বোঝা হবেনা। সেজন্য আমি এতোদূর তাকে এনেছি।

তার মা আরও বলেন, ওর জন্মের পর থেকেই ওর বাবা আমাকে সাপোর্ট করেছে। আমার আরেকটা ছোট ছেলে রয়েছে। তবে আমার স্বপ্ন আমার বড় মেয়ে মীমকে ঘিরেই। আমি চাই আমার মেয়ে একটা সরকারি চাকরি করুক, নিজের পায়ে দাঁড়াক, সমাজের বোঝা না হোক।