ঢাকা ০২:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে বাংলাদেশি নাগরিকে রুপান্তরিত হচ্ছে রোহিঙ্গারা

নিজস্ব সংবাদ

ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায়  চাকরি করে চেয়ারম্যানে এবং মেয়রের আইডি ব্যবহার করে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন তৈরি করে দিচ্ছিল একটি চক্র। বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা করে নিতো। আর এই জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে রোহিঙ্গারা নিজেদের বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় দিয়ে এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশ-বিদেশে। তারা ব্যাংক ঋণসহ দেশের অন্যান্য নাগরিকদের মতো নানান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে।

রোহিঙ্গা ছাড়া অনেক দাগি, খুনি ও সন্ত্রাসীরাও মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচ করে এই চক্রের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে তাদের প্রকৃত পরিচয় গোপন করছে। তারাও নতুন করে এনআইডি, পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে। নতুন জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড হওয়াতে তাদের পূর্বের অপরাধ পুলিশের তদন্তে উঠে আসছে না। তাই তারা সহজেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (দক্ষিণ) এসব অভিযোগের তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পেয়ে পাঁচ জন আসামিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. শহিদুল ইসলাম মুন্না, মো. রাসেল খান, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আব্দুর রশিদ ও সোহেল চন্দ্র। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি মোবাইল ফোন ও ৮টি সিম উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে ২ জন কম্পিউটার অপারেটর, ১ জন স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে এবং বাকি ২ জন পড়াশোনা করে। কিন্তু তারা রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরিতে অধিক লাভ দেখে তারা এই অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। আর রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব না থাকাতে তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই অনেক রোহিঙ্গারা লাভবান হওয়ার জন্য জন্মনিবন্ধন তৈরি করেছে। এতে করে গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. আব্দুর রশিদ দিনাজপুর বিরল পৌরসভার এবং সোহেল চন্দ্র বিরলের ১০নং রাণীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত। রশিদ বিরল পৌরসভার মেয়র সবুজার সিদ্দিক সাগর ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা হরানন্দ রায় এবং সোহেল চন্দ্র রাণীপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল্লামা আজাদ ইকবাল ও ইউনিয়ন সচিব মোহাম্মদ মানিক হোসেনের জন্মনিবন্ধন সার্ভারের একসেস ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন সনদ ও নম্বর দিয়ে আসছিল।

আর তাদেরকে জন্মনিবন্ধন তৈরি করে দেয়ার কাজ এনে দিতো মো. মোস্তাফিজুর  রহমান। গ্রেপ্তারকৃত মো. শহিদুল ইসলাম মুন্না এবং মো. রাসেল খানও তাদের জন্মনিবন্ধন তৈরি করার কাজ এনে দিতো। তারা দু’জন বাগেরহাট ও নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। গ্রেপ্তারকৃত সবাই আগে থেকেই একে অপরের পরিচিত এবং একই ধরনের কাজ দীর্ঘদিন ধরে করছিল। তারা রোহিঙ্গাদের বিরল পৌরসভার বাসিন্দা দেখিয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে দিতো। অবৈধভাবে এসব কাজ করে যে লাভ হতো সেগুলো তারা ভাগাভাগি করে নিতো। কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়নে তাদের সহযোগীরা রয়েছে। অবৈধ এসব কাজ তারা যেকোনো পৌরসভা ও ইউনিয়ন থেকে করিয়ে নিতো।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কক্সবাজার এলাকার রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সংগ্রহ করে এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরি করেছে। তাদেরকে সহায়তা করছে পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবের কম্পিউটার অপারেটররা। এসব অভিযোগে আমরা পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছি।

পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে চাকরি করার সুবাদে তাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের বড় কর্তাদের সার্ভারের আইডি পাসওয়ার্ড থাকতো। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জন্মনিবন্ধন তৈরি করে দিতো। হারুন বলেন, আমরা আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। যাদের ধরেছি তারাও এসবের সঙ্গে জড়িত। প্রায়ই তারা মানুষকে অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন করে দেয়। এসবের সঙ্গে পাসপোর্ট, নির্বাচন কমিশন, পুলিশের কেউ জড়িত আছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখবো। কারণ কীভাবে তারা কাদেরকে দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করে সেটি জানার চেষ্টা করবো।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১২:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
৭৯ বার পড়া হয়েছে

যেভাবে বাংলাদেশি নাগরিকে রুপান্তরিত হচ্ছে রোহিঙ্গারা

আপডেট সময় ১২:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায়  চাকরি করে চেয়ারম্যানে এবং মেয়রের আইডি ব্যবহার করে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন তৈরি করে দিচ্ছিল একটি চক্র। বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা করে নিতো। আর এই জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে রোহিঙ্গারা নিজেদের বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় দিয়ে এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশ-বিদেশে। তারা ব্যাংক ঋণসহ দেশের অন্যান্য নাগরিকদের মতো নানান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে।

রোহিঙ্গা ছাড়া অনেক দাগি, খুনি ও সন্ত্রাসীরাও মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচ করে এই চক্রের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে তাদের প্রকৃত পরিচয় গোপন করছে। তারাও নতুন করে এনআইডি, পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে। নতুন জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড হওয়াতে তাদের পূর্বের অপরাধ পুলিশের তদন্তে উঠে আসছে না। তাই তারা সহজেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (দক্ষিণ) এসব অভিযোগের তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পেয়ে পাঁচ জন আসামিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. শহিদুল ইসলাম মুন্না, মো. রাসেল খান, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আব্দুর রশিদ ও সোহেল চন্দ্র। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি মোবাইল ফোন ও ৮টি সিম উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে ২ জন কম্পিউটার অপারেটর, ১ জন স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে এবং বাকি ২ জন পড়াশোনা করে। কিন্তু তারা রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরিতে অধিক লাভ দেখে তারা এই অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। আর রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব না থাকাতে তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই অনেক রোহিঙ্গারা লাভবান হওয়ার জন্য জন্মনিবন্ধন তৈরি করেছে। এতে করে গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. আব্দুর রশিদ দিনাজপুর বিরল পৌরসভার এবং সোহেল চন্দ্র বিরলের ১০নং রাণীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত। রশিদ বিরল পৌরসভার মেয়র সবুজার সিদ্দিক সাগর ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা হরানন্দ রায় এবং সোহেল চন্দ্র রাণীপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল্লামা আজাদ ইকবাল ও ইউনিয়ন সচিব মোহাম্মদ মানিক হোসেনের জন্মনিবন্ধন সার্ভারের একসেস ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন সনদ ও নম্বর দিয়ে আসছিল।

আর তাদেরকে জন্মনিবন্ধন তৈরি করে দেয়ার কাজ এনে দিতো মো. মোস্তাফিজুর  রহমান। গ্রেপ্তারকৃত মো. শহিদুল ইসলাম মুন্না এবং মো. রাসেল খানও তাদের জন্মনিবন্ধন তৈরি করার কাজ এনে দিতো। তারা দু’জন বাগেরহাট ও নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। গ্রেপ্তারকৃত সবাই আগে থেকেই একে অপরের পরিচিত এবং একই ধরনের কাজ দীর্ঘদিন ধরে করছিল। তারা রোহিঙ্গাদের বিরল পৌরসভার বাসিন্দা দেখিয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে দিতো। অবৈধভাবে এসব কাজ করে যে লাভ হতো সেগুলো তারা ভাগাভাগি করে নিতো। কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়নে তাদের সহযোগীরা রয়েছে। অবৈধ এসব কাজ তারা যেকোনো পৌরসভা ও ইউনিয়ন থেকে করিয়ে নিতো।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কক্সবাজার এলাকার রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সংগ্রহ করে এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরি করেছে। তাদেরকে সহায়তা করছে পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবের কম্পিউটার অপারেটররা। এসব অভিযোগে আমরা পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছি।

পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে চাকরি করার সুবাদে তাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের বড় কর্তাদের সার্ভারের আইডি পাসওয়ার্ড থাকতো। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জন্মনিবন্ধন তৈরি করে দিতো। হারুন বলেন, আমরা আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। যাদের ধরেছি তারাও এসবের সঙ্গে জড়িত। প্রায়ই তারা মানুষকে অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন করে দেয়। এসবের সঙ্গে পাসপোর্ট, নির্বাচন কমিশন, পুলিশের কেউ জড়িত আছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখবো। কারণ কীভাবে তারা কাদেরকে দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করে সেটি জানার চেষ্টা করবো।