রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা
প্রথম বারের মতো রাজশাহীতে নির্মিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। অদ্য ১৮ মে, ২০২৪ শনিবার বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে পুরাতন সার্ভে ইন্সটিটিউটের জায়গায় পূর্ব নির্ধারিত স্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। ইতিপূর্বে ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই স্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রয়াত প্রধান প্রসিকিউটর ভাষাসৈনিক অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু। তাঁর সেই ভিত্তিস্থাপনের ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ ১৮ মে ২০২৪ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্ধারিত স্থানে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবুল হক বকু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুবুর রহমান, বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুশান্ত সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বদিউজ্জামান খায়ের, আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ও রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক সাইদুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু ও জেলা পরিষদের সদস্য আবদুর রশিদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পাকিস্তানী প্রেতাত্মাদের চক্রান্তে ঘাতকের হাতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহত সদস্যবৃন্দ এবং জাতীয় চার নেতাসহ ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু: রেজা হাসান।
বক্তারা বলেন, রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগে ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু যেস্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, সেখানেই এর নির্মাণকাজ শুরু হলো।
ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু আজ আমাদের কাছ থেকে চির বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সংগ্রামী জীবনের অংশ হিসেবে এই কাজটিও আমাদের মাঝে চির অমর হয়ে থাকবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণকাজের শুভ সূচনার মধ্য দিয়ে আজ রাজশাহীবাসী ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এদেশের মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষের প্রতি অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা জানালো।
বক্তারা আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত কাজ করে চলেছেন, তখনও তাঁর বিরুদ্ধে দেশি বিদেশি চক্রান্ত আর
ষড়যন্ত্র থেমে নেই। সেগুলো মোকাবিলা করেই তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের। একথা আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে গেলেই ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানী প্রেতাত্মারা চক্রান্ত করতে থাকে। এতো বছর পর রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হতে যাচ্ছে, এটা নিয়েও হয়তো সেই একই গোষ্ঠী ও তাদের দোসররা নানা চক্রান্ত করতে পারে। কিন্তু আমরা তা কোনোক্রমেই সফল হতে দেবো না।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল হামিদ সরকার টেকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান, রাজশাহী জেলা পরিষদের সদস্যবৃন্দ যথাক্রমে মো. মাইনুল ইসলাম,মো. আব্দুর রশিদ,মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. তফিকুল ইসলাম, দীলিপ কুমার সরকার, মো. জনাব আলী, মো. আবু জাফর প্রাং, মো. মহিদুল ইসলাম, মো. আসাদুজ্জামান মাসুদ, শিউলী রানী সাহা, সুলতানা পারভীন রিনা, মোসা. সাজেদা বেগম প্রমূখ।
উল্লেখ্য, রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে পুরাতন সার্ভে ইন্সটিটিউটের প্রায় ১ একর জায়গাজুড়ে প্রায় ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি নির্মিত হচ্ছে।