ঢাকা ০১:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতের ক্যাম্পাসে প্রাণোচ্ছল চড়ুইভাতি, রোমাঞ্চকর একদিন!

ওয়াসিফ আল আবরার, ইবি

 

চড়ুইভাতি!! ট্যুর, পিকনিক, পার্টি বা বনভোজন নামক শব্দের সাথে কিঞ্চিত পরিচিত হলেও চড়ুইভাতি শব্দটার সাথে আধুনিকতার ছোয়া পাওয়া এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা খুব একটা পরিচিত নয় বৈ কি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় চড়ুইভাতি হারিয়ে যাচ্ছে পিকনিক আর শিক্ষা সফরের ভীড়ে। তবে, সমসাময়িক সময়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আনন্দ, উৎসবের অপর নাম চড়ুইভাতি। এটি যেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অন্যতম একটি অংশ।

 

চড়ুইভাতি বা বনভোজনের ইতিহাস আমাদের বেশ পুরনো। একটা সময় গ্রাম্য আবহে চোখে পড়ত দল বেঁধে রান্না-বান্না আর খাওয়া-দাওয়া দৃশ্য। এর আগে কয়েকদিন ধরে সংগ্রহ করা হতো চাল, ডাল, মসলাপাতি। গ্রামীণ পরিবেশের সেই ছোট বেলার চড়ুইভাতি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে ছোট বেলার সেই আনন্দঘন সময়ে ফিরে যেতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মজা সবার সাথে ভাগ করে আন্তরিকতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থীরা চড়ুইভাতির আয়োজন করে।

 

দীর্ঘদিন ধরে জার্নালিজম পরিবারের তিন ব্যাচের চড়ুইভাতি আয়োজনের জন্য বার বার তারিখ ঠিক করা হচ্ছিল। কিন্তু ঠিক জুতসই হচ্ছিল না। ক্লাস, পরীক্ষার চাপ থেকে কিঞ্চিৎ মুক্তি পেতে কেউ কেউ বাড়ি ছুটছিল। তাই ব্যাটে বলে হয়ে উঠছিলও না। তবে সেটা সম্ভবপর হয়েছে সপ্তাহব্যাপী ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পরে।

 

চড়ুইভাতি আয়োজনটি করা হয়েছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক পাড়ে। বিস্তীর্ণ লেকপাড়, পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেন, নিরিবিলি স্থান, সেইসাথে রয়েছে শীতের কড়া রোদ ও লেক পাড়ের হিমেল হাওয়া। চড়ুইভাতি উপলক্ষে আগের দিন থেকেই সাজ সাজ রব পড়ে গিয়েছিল বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে। কারুকাজে দক্ষ সিনিয়র জুনিয়র সবাই লেগে যায় কাগজ কেটে কেটে বিভিন্ন জিনিস, ফটোফ্রেম ও কর্কশিট কেটে বিভাগের নাম লিখতে।

 

পরেরদিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় চড়ুইভাতির দিন উদযাপন। বিভাগের তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একে একে আসতে শুরু করে ইবি লেক পাড়ে। সে যেন এক আনন্দঘন পরিবেশ। একপাশে কয়েকজন মিলে হাঁড়িপাতিল বসিয়ে রান্না করছেন। কেউবা অদূরেই বানানো মিলনমেলার ফটোফ্রেম, লেকের বিভিন্ন গাছপালা এবং ব্রীজে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে, আবার কেউবা মশগুল আড্ডায়, কেউবা আবার গল্প করছে, গান গাইছে ইবি লেক পাড়ে। রান্নার পাশাপাশি সমানতালে চলতে থাকে গান, গল্প, আড্ডা ও ছবি তোলার বাহার। মিউজিক বক্সে নানা রঙের সুরের মিতালি আর রান্নার সুগন্ধে এক অন্যরকম ভালোলাগার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

 

দুপুর হতে না হতেই একে একে এসে উপস্থিত হন জার্নালিজম পরিবারের শিক্ষকবৃন্দ সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ট্রেজারার এবং অন্যান্য বিভাগের আমন্ত্রিত শিক্ষকবৃন্দ। তারা উপস্থিত হওয়ার পর আরেক দফা শুরু হয় ফটোসেশন। প্রিয় শিক্ষকদের সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকেরাও যেন কর্মব্যস্ততার ভীড় ঠেলে একটু সময়ের জন্য মিশে যান শিক্ষার্থীদের আনন্দের ভেলায়। এরই মাঝে রান্নার কাজ শেষ হয়ে এলে শুরু হয় মধ্যাহ্নভোজের পালা। একে একে প্যান্ডেলের টেবিলে এবং পাশের গাছতলায় গোল হয়ে মধ্যাহ্নভোজে বসে যায় ছেলেমেয়েরা। খাসির রেজালা, মুরগীর রোস্ট আর দই-মিষ্টির বাহারি পদের সুস্বাদু খাবারে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে সবাই।

 

খাওয়াদাওয়ার পালা শেষ হলে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী চলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দাবা, ক্যারাম, ব্যাডমিন্টন ও ফুটবল খেলার বিজয়ীদের হাতে চ্যাম্পিয়নের পুরষ্কার তুলে দেন বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, শিক্ষক তন্ময় সাহা জয়, উজ্জ্বল হোসেন সহ আমন্ত্রিত শিক্ষকবৃন্দ। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে সার্বিকভাবে শ্রেষ্ঠত্ব বজায়ে রাখা ২০২১-২২ সেশনের বিজয়োল্লাস ছিল অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। ছেলেদের এককে ব্যাডমিন্টন, ক্যারাম ও ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থীরা চ্যাম্পিয়নের ট্রফি নিয়ে মেতে ওঠে উদযাপনে। পরবর্তীতে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভাগের তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গান পরিবেশন করে, কবিতা আবৃত্তি করে, নৃত্য পরিবেশন করে। শেষ বিকেলের সুন্দর, মনোরম পরিবেশে উপস্থিত সবাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করে।

 

আড্ডা, গান আর খাওয়া দাওয়া করতে করতে দিন শেষে সন্ধ্যা নামে ইবির বুকে। শেষ বেলার স্মৃতিটা ক্যামেরা বন্দি করে রাখতে চেষ্টার কমতি ছিল না কারোরই। চড়ুইভাতির ইতি টেনে সবাই হাঁটতে শুরু করে নিজ নিজ হলের পথে। সেই পুরোনো সন্ধ্যা, একই বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়র, একই সেই প্রাণের ইবি ক্যাম্পাস; তবে দিনটি ছিল অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে অত্যন্ত আলাদা। শিক্ষক-সিনিয়র-জুনিয়রের এই মিলনমেলা অমর হোক, প্রত্যেকের মেলবন্ধন অটুট থাকুক, সেই প্রত্যাশায় সমাপ্ত হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম পরিবারের চড়ুইভাতি।

 

লেখক:
ওয়াসিফ আল আবরার,
শিক্ষার্থী, জার্নালিজম বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০১:৫৭:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
২৩৮ বার পড়া হয়েছে

শীতের ক্যাম্পাসে প্রাণোচ্ছল চড়ুইভাতি, রোমাঞ্চকর একদিন!

আপডেট সময় ০১:৫৭:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩

 

চড়ুইভাতি!! ট্যুর, পিকনিক, পার্টি বা বনভোজন নামক শব্দের সাথে কিঞ্চিত পরিচিত হলেও চড়ুইভাতি শব্দটার সাথে আধুনিকতার ছোয়া পাওয়া এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা খুব একটা পরিচিত নয় বৈ কি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় চড়ুইভাতি হারিয়ে যাচ্ছে পিকনিক আর শিক্ষা সফরের ভীড়ে। তবে, সমসাময়িক সময়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আনন্দ, উৎসবের অপর নাম চড়ুইভাতি। এটি যেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অন্যতম একটি অংশ।

 

চড়ুইভাতি বা বনভোজনের ইতিহাস আমাদের বেশ পুরনো। একটা সময় গ্রাম্য আবহে চোখে পড়ত দল বেঁধে রান্না-বান্না আর খাওয়া-দাওয়া দৃশ্য। এর আগে কয়েকদিন ধরে সংগ্রহ করা হতো চাল, ডাল, মসলাপাতি। গ্রামীণ পরিবেশের সেই ছোট বেলার চড়ুইভাতি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে ছোট বেলার সেই আনন্দঘন সময়ে ফিরে যেতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মজা সবার সাথে ভাগ করে আন্তরিকতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থীরা চড়ুইভাতির আয়োজন করে।

 

দীর্ঘদিন ধরে জার্নালিজম পরিবারের তিন ব্যাচের চড়ুইভাতি আয়োজনের জন্য বার বার তারিখ ঠিক করা হচ্ছিল। কিন্তু ঠিক জুতসই হচ্ছিল না। ক্লাস, পরীক্ষার চাপ থেকে কিঞ্চিৎ মুক্তি পেতে কেউ কেউ বাড়ি ছুটছিল। তাই ব্যাটে বলে হয়ে উঠছিলও না। তবে সেটা সম্ভবপর হয়েছে সপ্তাহব্যাপী ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পরে।

 

চড়ুইভাতি আয়োজনটি করা হয়েছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক পাড়ে। বিস্তীর্ণ লেকপাড়, পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেন, নিরিবিলি স্থান, সেইসাথে রয়েছে শীতের কড়া রোদ ও লেক পাড়ের হিমেল হাওয়া। চড়ুইভাতি উপলক্ষে আগের দিন থেকেই সাজ সাজ রব পড়ে গিয়েছিল বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে। কারুকাজে দক্ষ সিনিয়র জুনিয়র সবাই লেগে যায় কাগজ কেটে কেটে বিভিন্ন জিনিস, ফটোফ্রেম ও কর্কশিট কেটে বিভাগের নাম লিখতে।

 

পরেরদিন সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় চড়ুইভাতির দিন উদযাপন। বিভাগের তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একে একে আসতে শুরু করে ইবি লেক পাড়ে। সে যেন এক আনন্দঘন পরিবেশ। একপাশে কয়েকজন মিলে হাঁড়িপাতিল বসিয়ে রান্না করছেন। কেউবা অদূরেই বানানো মিলনমেলার ফটোফ্রেম, লেকের বিভিন্ন গাছপালা এবং ব্রীজে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে, আবার কেউবা মশগুল আড্ডায়, কেউবা আবার গল্প করছে, গান গাইছে ইবি লেক পাড়ে। রান্নার পাশাপাশি সমানতালে চলতে থাকে গান, গল্প, আড্ডা ও ছবি তোলার বাহার। মিউজিক বক্সে নানা রঙের সুরের মিতালি আর রান্নার সুগন্ধে এক অন্যরকম ভালোলাগার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

 

দুপুর হতে না হতেই একে একে এসে উপস্থিত হন জার্নালিজম পরিবারের শিক্ষকবৃন্দ সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ট্রেজারার এবং অন্যান্য বিভাগের আমন্ত্রিত শিক্ষকবৃন্দ। তারা উপস্থিত হওয়ার পর আরেক দফা শুরু হয় ফটোসেশন। প্রিয় শিক্ষকদের সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকেরাও যেন কর্মব্যস্ততার ভীড় ঠেলে একটু সময়ের জন্য মিশে যান শিক্ষার্থীদের আনন্দের ভেলায়। এরই মাঝে রান্নার কাজ শেষ হয়ে এলে শুরু হয় মধ্যাহ্নভোজের পালা। একে একে প্যান্ডেলের টেবিলে এবং পাশের গাছতলায় গোল হয়ে মধ্যাহ্নভোজে বসে যায় ছেলেমেয়েরা। খাসির রেজালা, মুরগীর রোস্ট আর দই-মিষ্টির বাহারি পদের সুস্বাদু খাবারে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে সবাই।

 

খাওয়াদাওয়ার পালা শেষ হলে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী চলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দাবা, ক্যারাম, ব্যাডমিন্টন ও ফুটবল খেলার বিজয়ীদের হাতে চ্যাম্পিয়নের পুরষ্কার তুলে দেন বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, শিক্ষক তন্ময় সাহা জয়, উজ্জ্বল হোসেন সহ আমন্ত্রিত শিক্ষকবৃন্দ। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে সার্বিকভাবে শ্রেষ্ঠত্ব বজায়ে রাখা ২০২১-২২ সেশনের বিজয়োল্লাস ছিল অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। ছেলেদের এককে ব্যাডমিন্টন, ক্যারাম ও ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থীরা চ্যাম্পিয়নের ট্রফি নিয়ে মেতে ওঠে উদযাপনে। পরবর্তীতে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভাগের তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গান পরিবেশন করে, কবিতা আবৃত্তি করে, নৃত্য পরিবেশন করে। শেষ বিকেলের সুন্দর, মনোরম পরিবেশে উপস্থিত সবাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করে।

 

আড্ডা, গান আর খাওয়া দাওয়া করতে করতে দিন শেষে সন্ধ্যা নামে ইবির বুকে। শেষ বেলার স্মৃতিটা ক্যামেরা বন্দি করে রাখতে চেষ্টার কমতি ছিল না কারোরই। চড়ুইভাতির ইতি টেনে সবাই হাঁটতে শুরু করে নিজ নিজ হলের পথে। সেই পুরোনো সন্ধ্যা, একই বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়র, একই সেই প্রাণের ইবি ক্যাম্পাস; তবে দিনটি ছিল অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে অত্যন্ত আলাদা। শিক্ষক-সিনিয়র-জুনিয়রের এই মিলনমেলা অমর হোক, প্রত্যেকের মেলবন্ধন অটুট থাকুক, সেই প্রত্যাশায় সমাপ্ত হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম পরিবারের চড়ুইভাতি।

 

লেখক:
ওয়াসিফ আল আবরার,
শিক্ষার্থী, জার্নালিজম বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়