“আর ৯/১০ সেকেন্ড থাকলে সেখানেই মারা যেতাম” -ইবি শিক্ষার্থী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বাসে সিট ধরাকে কেন্দ্র করে এক শিক্ষার্থীকে গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আবু জাহেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপরদিকে অভিযুক্তরা উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রতন রায় ও রিহাব রেদোওয়ান। তারা উভয়ই শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের অনুসারী।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার চেয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী। এতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবী জানানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া যাওয়ার জন্য দুপুর তিনটার বাসে উঠি। আমার বন্ধু আমার জন্য দুইটা সিট ধরে। আমি একটা সিটে বসে অন্য সিটে রতন রায়কে বসতে দেই। কিছুক্ষণ পরে তিনি নিচে গিয়ে কয়েকজন বন্ধু/বান্ধুবী নিয়ে আসেন এবং আমাকে বলে ওপাশে চাপেন। আমি অন্য সিটে যেতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে জোরাজোরি করে। একপর্যায়ে তারা আমাকে বলে, ওই তোর সেশন কত রে? আমি বলি সেশন কেন ভাই, পুরো পরিচয় দিব? তৎক্ষনাৎ রতন আচমকা আমার গলাটিপে ধরে। এসময় তার সঙ্গে থাকা বন্ধু রিহাব রেদওয়ান আমার চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেয়। আমি হাত সরানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তারা কিছুতেই ছাড়ছিল না। পরে আমি সিট থেকে ওঠে গেলাম, তারপরেও ছাড়ে নাই। পরে আমার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। বাসের সবাই চিল্লাপাল্লা শুরু করে আমাকে ছাড়িয়ে নেই। আমার মনে হয়েছিল আমি আর ৯/১০ সেকেন্ড থাকলে সেখানে মারা যেতাম।
তবে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবী করে অভিযুক্ত রতন রায় বলেন, আমি ওই ছেলের গলাটিপে ধরিনি। আমরা যদি তার গলাটিপে বা চোখ আঙ্গুল দিতাম তাহলে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা। আমরা এই বিষয়ে প্রক্টর স্যারের নিকট একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছি সেখানে বাসের প্রত্যক্ষদর্শী দুইজনের স্বাক্ষর রয়েছে।
আরেক অভিযুক্ত রিহাব রেদোওয়ান বলেন, তার এসব অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। মূলত বাসের পিছনের সিটে দুইটি মেয়ে বসা ছিল, সে (ভুক্তভোগী) দুইজনের মাঝখানে বসা ছিল। তাই আমরা তাকে ওপাশে সরে যেতে বললে একপর্যায়ে তার সাথে আমাদের বাকবিতণ্ডা হয়। তখন সে তার বড় ভাই মজুমদারকে কল দিয়ে আনলে তিনি বিষয়টা মীমাংসা করার চেষ্টা করেছিলেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আবু জাহেদ বলেন, ওনারা বাসে উঠে আমাকে সরে যেতে বললে আমি অস্বীকৃতি জানাই। একপর্যায়ে তারা আমার গলাটিপে ধরে, মুখ ও চোখে হাত দিয়ে ধরে রাখে। এভাবে প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে আমাকে শ্বাসরোধ অবস্থায় রাখে। আর ৫ সেকেন্ড ধরে রাখলে মারা যেতাম। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি এখনো শুনিনি। তবে এমন কিছু হয়ে থাকলে তা অপ্রত্যাশিত। প্রমাণিত হলে ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোনো অন্যায় কাজ করলে তার সে দায় সংগঠন নিবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমরা অভিযোগগুলো পেয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডির মিটিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।