ঢাকা ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইবিতে মুক্তমঞ্চ তৈরিতে বৃক্ষনিধন; মানববন্ধন শিক্ষার্থীদের

ওয়াসিফ আল আবরার, ইবি

ক্যাম্পাসে অজস্র ফাঁকা জায়গা থাকা সত্বেও দুই যুগের অধিক পুরোনো গাছ কেটে মুক্তমঞ্চ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসন। উক্ত স্থানের পাশেই ফাকা জায়গা থাকলেও সেখানে মঞ্চ তৈরি না করে নির্বিচারে বৃক্ষনিধনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থী ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের মধ্যবর্তী বটতলার পাশে ‘বৈশাখী মঞ্চ’ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যেই মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় তিনটি পুরোনো গাছ কাটা হয়েছে। দুই যুগ আগে নিজস্ব অর্থায়নে সেই গাছগুলোসহ প্রায় ১১০০ গাছ লাগিয়েছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুঈদ রহমান।

গাছ কাটার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় ‘গাছ কেটে উন্নয়ন চাই না’, ‘নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ হোক’, ‘সৌন্দর্য বর্ধনের নামে বৃক্ষ নিধন বন্ধ হোক’, ‘গাছ লাগাও জীবন বাঁচাও ‘লক্ষ গাছ লক্ষ প্রাণ’, ‘বাঁচাও প্রকৃতি বাঁচাও প্রাণ ‘ সহ নানা প্ল্যাকার্ড দেখা যায় সংগঠনের সদস্যদের।

এসময় ইবি সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত কখনো ক্যাম্পাসের উন্নয়নে আসতে পারে না। দুইটি একাডেমিক ভবনের মাঝে মঞ্চ বানানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। আশাকরি প্রশাসন আমাদের কথাগুলো শুনে একটি সুষ্ঠু সমাধান দিবে।

 

পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্যের সাধারণ সম্পাদক হাসিন ইনতাশাফ অর্প বলেন, প্রশাসনের গাছ লাগানোর পরিবর্তে গাছ কর্তনের প্রতি আগ্রহ দেখে হতবাক হই। এমন একটি জায়গায় মঞ্চ করার উদ্যোগ প্রশাসনের চরম উদাসীনতা ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত।

গাছ রোপণকারী অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুঈদ রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে ধারণ করার জায়গা থেকেই আমি নিজ অর্থায়নে ৫০০ রেইনট্রি গাছ লাগিয়েছিলাম ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে। গাছ গুলো যখন উপড়ে পড়েছে তখন হৃদয় ব্যথিত হয়েছে। তবে আমার হাতে লাগানো হলেও গাছের মালিকানা ত আমার নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে যেকোন সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। তবে আমার মনে হয় পেছনে গাছ রেখেও মঞ্চ করা যেত।

এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌলশী (ভারপ্রাপ্ত) কে এম শরীফ উদ্দীন বলেন, ওই জায়গায় মঞ্চ করলে গাছ কাটা ছাড়া উপায় নেই। প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ, ডিন, শিক্ষক সমিতিহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই গাছ কাটা হয়েছে। এখানে গাছ রেখে মঞ্চ করলেও শিকড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

উপাচার্য ছুটিতে থাকায় দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এখানে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রোগ্রামে মৃত গাছের ডালপালা পড়ে আঘাতের সম্ভাবনা থাকে। আর আমরা এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ স্বার্থে ডিন, শিক্ষক সমিতিসহ সবার সাথে কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মঞ্চ তৈরির পরে সাথে সাথে আরো ৫০০ বৃক্ষ রোপণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরও ইবি লেকের সংস্কার কাজের সময় খননকাজে ব্যবহৃত গাড়ির যাতায়াতের জন্য লেকের ধারের ছোট-বড় অন্তত ৩০টি গাছ কেটে ফেলা হয়।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৫:৫৫:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ মার্চ ২০২৪
৮৭ বার পড়া হয়েছে

ইবিতে মুক্তমঞ্চ তৈরিতে বৃক্ষনিধন; মানববন্ধন শিক্ষার্থীদের

আপডেট সময় ০৫:৫৫:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ মার্চ ২০২৪

ক্যাম্পাসে অজস্র ফাঁকা জায়গা থাকা সত্বেও দুই যুগের অধিক পুরোনো গাছ কেটে মুক্তমঞ্চ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসন। উক্ত স্থানের পাশেই ফাকা জায়গা থাকলেও সেখানে মঞ্চ তৈরি না করে নির্বিচারে বৃক্ষনিধনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থী ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের মধ্যবর্তী বটতলার পাশে ‘বৈশাখী মঞ্চ’ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যেই মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় তিনটি পুরোনো গাছ কাটা হয়েছে। দুই যুগ আগে নিজস্ব অর্থায়নে সেই গাছগুলোসহ প্রায় ১১০০ গাছ লাগিয়েছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুঈদ রহমান।

গাছ কাটার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় ‘গাছ কেটে উন্নয়ন চাই না’, ‘নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ হোক’, ‘সৌন্দর্য বর্ধনের নামে বৃক্ষ নিধন বন্ধ হোক’, ‘গাছ লাগাও জীবন বাঁচাও ‘লক্ষ গাছ লক্ষ প্রাণ’, ‘বাঁচাও প্রকৃতি বাঁচাও প্রাণ ‘ সহ নানা প্ল্যাকার্ড দেখা যায় সংগঠনের সদস্যদের।

এসময় ইবি সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত কখনো ক্যাম্পাসের উন্নয়নে আসতে পারে না। দুইটি একাডেমিক ভবনের মাঝে মঞ্চ বানানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। আশাকরি প্রশাসন আমাদের কথাগুলো শুনে একটি সুষ্ঠু সমাধান দিবে।

 

পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্যের সাধারণ সম্পাদক হাসিন ইনতাশাফ অর্প বলেন, প্রশাসনের গাছ লাগানোর পরিবর্তে গাছ কর্তনের প্রতি আগ্রহ দেখে হতবাক হই। এমন একটি জায়গায় মঞ্চ করার উদ্যোগ প্রশাসনের চরম উদাসীনতা ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত।

গাছ রোপণকারী অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুঈদ রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে ধারণ করার জায়গা থেকেই আমি নিজ অর্থায়নে ৫০০ রেইনট্রি গাছ লাগিয়েছিলাম ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে। গাছ গুলো যখন উপড়ে পড়েছে তখন হৃদয় ব্যথিত হয়েছে। তবে আমার হাতে লাগানো হলেও গাছের মালিকানা ত আমার নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে যেকোন সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। তবে আমার মনে হয় পেছনে গাছ রেখেও মঞ্চ করা যেত।

এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌলশী (ভারপ্রাপ্ত) কে এম শরীফ উদ্দীন বলেন, ওই জায়গায় মঞ্চ করলে গাছ কাটা ছাড়া উপায় নেই। প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ, ডিন, শিক্ষক সমিতিহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই গাছ কাটা হয়েছে। এখানে গাছ রেখে মঞ্চ করলেও শিকড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

উপাচার্য ছুটিতে থাকায় দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এখানে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রোগ্রামে মৃত গাছের ডালপালা পড়ে আঘাতের সম্ভাবনা থাকে। আর আমরা এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ স্বার্থে ডিন, শিক্ষক সমিতিসহ সবার সাথে কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মঞ্চ তৈরির পরে সাথে সাথে আরো ৫০০ বৃক্ষ রোপণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরও ইবি লেকের সংস্কার কাজের সময় খননকাজে ব্যবহৃত গাড়ির যাতায়াতের জন্য লেকের ধারের ছোট-বড় অন্তত ৩০টি গাছ কেটে ফেলা হয়।