এখন পর্যন্ত প্রশাসনের মধ্যে ফ্যাসিবাদের ভূত বাস করছে: ফখরুল
প্রশাসনের মধ্যে স্বৈরাচারের ভূত বসে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এদেরকে তাড়াতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো প্রচেষ্টা সফল হবে না।’
শনিবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এক সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক এই সমাবেশে যোগ দেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এই যে ভূতগুলোকে নিয়ে যারা এতদিন জনগণের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে, যারা দুর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে-সেই ভূতেরা কিন্তু এখনো প্রশাসনের মধ্যে আছে। এই ভূতগুলোকে দূর করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের নেতৃত্বে বর্তমান যে সরকার এসেছে, আমরা সবাই মিলে এই সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছি-দেশকে সঠিক দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা তাদেরকে অবশ্যই সময় দিচ্ছি, সময় দেবো। কিন্তু বার বার প্রশ্ন আসে যে, কতদিন সময় দেবেন?
আমরা সেই পর্যন্ত সময় দেবো যে পর্যন্ত একটা যৌক্তিক সময়ে তারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) নির্বাচনের ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতি করি, আন্দোলন করেছি, জান দিয়েছি-প্রাণ দিয়েছি একটা লক্ষ্যে যে আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কোনো বিরাজনীতিকরণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আবারই মাইনাস টু দেখতে চাই না। আমরা আবার মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দেখতে চাই না। আমরা সত্যিকার অর্থে দেশে একটা সুস্থ উদারপন্থী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চাই। এজন্য আমরা তাদের হাতেই (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) দায়িত্ব দিয়েছি। আমরা মনে করেছি যে, তারা যোগ্য মানুষ, তারা কাজ করছেন। তাদেরকে অতি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই ব্যর্থ হয়নি, আমরা ’৫২ সালে জয়ী হয়েছি, ’৬৯ এ জয়ী হয়েছি, আমরা ’৭১ জয়ী হয়েছি, আমরা ’৯০ জয়ী হয়েছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, আমাদের সেই আন্দোলন শুরু হয়েছিলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আমরা ইনশাল্লাহ এবারও জয়ী হবো।
ফখরুল বলেন, ‘জাতীয়করণ হলেই আপনাদের সব সমস্যার সমাধান আসবে না। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, যোগ্য মানুষকে নিয়ে আসতে হবে। আমাকে একটা কাগজ তুলে দিয়েছেন আপনাদের নেতা সেলিম ভুঁইয়া সাহেব যে, ম্যাডামের একটা ঘোষণা ছিলো চাকরি জাতীয়করণ করার জন্য। ম্যাডামের ঘোষণা তো সকলের জন্য শিরোধার্য আমাদের জন্য। সেজন্য সরকারে আসতে হবে তো।
সরকারের কখন আসতে পারবেন? জনগণ যদি ভোট দিয়ে সরকারে পাঠায়। ভোট দেবে কখন? যখন আপনি জনগণের কাছে প্রমাণিত হবেন যে, আপনি যোগ্য, যে আপনি আগামী ৫ বছর তাদেরকে সুষ্ঠু ভাবে সেবা করতে পারবেন, কাজ করতে পারবেন। কিন্তু আমরা সব ক্ষেত্রে কি সেটা করতে পারছি।
তিনি বলেন, ‘পত্র-পত্রিকায় বাইরে বিভিন্ন সমালোচনা হচ্ছে । এই সমালোচনা যাতে না হয় সেজন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। যারা দুর্নীতি করে, যারা চাঁদাবাজি করে, জমি দখল করে তারা বিএনপির লোক নয়, তারা দুর্বৃত্ত। দল থেকে কিছু লোকের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমরা এটা নেবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আরেকটা কথা বলি, এটা আমার নিজের কথা, শিক্ষকদেরকে দলকানা হলে চলবে না। শিক্ষকদেরকে দলীয় রাজনীতি থেকে একটু দূরে থাকতে হবে। তা না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে না। কথাটা আপনাদের ভালো লাগবে না, আমি জানি।
আওয়ামী লীগ যে অবস্থা তৈরি করে দিয়ে গেছে, সেই পিয়ন থেকে গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের লোক। এই অবস্থা থেকে আমাদের বের করে নিয়ে আসতে হবে, বের করে নিয়ে এসে ভালো সুস্থ পরিবেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাদের জনগণের সাথে সম্পর্ক আছে, যারা শিক্ষিত, যারা কাজ করতে পারবেন তাদেরকে নিয়ে আসতে হবে। এটা যদি আপনারা মন থেকে করতে পারেন তাহলে পরিবর্তন হবে, নইলে পরিবর্তন হবে না।