ঢাকা ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেপথ্যে প্রত্যয় স্কিমঃ শিক্ষক আন্দোলনে অনিশ্চিত ইবির শিক্ষা-কার্যক্রম

ওয়াসিফ আল আবরার, ইবি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহবানে সাড়া দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষক সমিতির ডাকে চলছে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি। আন্দোলন চলাকালে ক্লাস সিডিউলে কিছুটা বিপর্যয় দেখা দিলেও পরিক্ষা সচল ছিল। তবে দাবি না মেনে নিলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির যে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা তাতে ইতোমধ্যে নোটিশকৃত আসন্ন পরিক্ষা গুলো নিয়ে দোটানায় আছেন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা।

ফেডারেশন সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ই মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত (এস,আর,ও নং-৪৭- আইন/২০২৪) পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানিয়ে ৪ঠা জুন সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করে শিক্ষকরা। কর্মবিরতিতে তারা পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবি জানান। সেখানে তারা ২৪শে জুনের মধ্যে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার না হলে ২৫-২৭ জুন পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি এবং ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন। তবে এসময়ে পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে বলে উল্লেখ্য করা হয়। তবে এসময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে পহেলা জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে হবে বলে জানান ফেডারেশনের নেতারা।

তবে এসব কর্মসূচির কারণে অনিশ্চয়তা ভর করছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কপালে। পহেলা জুলাই থেকে আদতে কি হবে তআ স্পষ্ট ভাবে জানে শিক্ষার্থীরা। নির্ধারিত পরিক্ষাগুলো হবে কীনা, তা নিয়ে একপ্রকার ধোঁয়াশা কাজ করছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, ফার্মেসি বিভাগ’সহ বেশ কিছু বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষায় কিছু সাবজেক্ট এর পরিক্ষার তারিখ রয়েছে এসময়ের মাঝে।

শিক্ষার্থীরা জানান, আগামী ১ জুলাই বা এর পরবর্তী কাছাকাছি সময়ে থাকা পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন তারা। ঈদের ছুটি কাটিয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসা নিয়েও দোটানায় ভুগছেন অনেকে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকেও পরীক্ষা হবে কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হচ্ছে না। এদিকে আবার শিক্ষক সমিতির পহেলা জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতির জন্য পরীক্ষা হওয়া নিয়েও সংশয় তাদের মনে।

এবিষয়ে ইবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা আগামী ১ তারিখ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল সকল কার্যক্রম থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার কথা আছে। তবে চলমান বিষয়টি নিয়ে কাঙ্ক্ষিত সমাধান পেয়ে গেলে আমাদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসতে পারে। তাই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের বিষয়টি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, দাবি মানা না হলে দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে সেটা ফেডারেশনের প্রজ্ঞাপনেই বলা আছে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। পূর্বনির্ধারিত পরিক্ষা সমূহের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রজ্ঞাপনে ১ তারিখ থেকে চলমান সকল পরীক্ষাও স্থগিত থাকবে – এমনটাই বলা আছে। বিষয়টি বিভাগের চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে যারা আন্দোলনে আছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। বিভাগের শিক্ষকরা বিভাগের পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে আমি চাইবো যেনো দ্রুত এর একটা সমাধান হয়ে যায়।

শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এধরণের আন্দোলন বা কর্মসূচি চলমান থাকলে অবশ্যই সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হতে পারে৷ তবে শিক্ষকরা চাইলে আবার সেই ক্ষতিটুকু পুষিয়ে নিতে পারবেন। শিক্ষকদের প্রতি আহবান থাকবে যখন বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে তারা যেন এই বিষয়ে নজর দিয়ে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে সহায়তা করে।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৪:৪০:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪
১৪ বার পড়া হয়েছে

নেপথ্যে প্রত্যয় স্কিমঃ শিক্ষক আন্দোলনে অনিশ্চিত ইবির শিক্ষা-কার্যক্রম

আপডেট সময় ০৪:৪০:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহবানে সাড়া দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষক সমিতির ডাকে চলছে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি। আন্দোলন চলাকালে ক্লাস সিডিউলে কিছুটা বিপর্যয় দেখা দিলেও পরিক্ষা সচল ছিল। তবে দাবি না মেনে নিলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির যে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা তাতে ইতোমধ্যে নোটিশকৃত আসন্ন পরিক্ষা গুলো নিয়ে দোটানায় আছেন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা।

ফেডারেশন সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ই মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত (এস,আর,ও নং-৪৭- আইন/২০২৪) পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানিয়ে ৪ঠা জুন সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করে শিক্ষকরা। কর্মবিরতিতে তারা পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবি জানান। সেখানে তারা ২৪শে জুনের মধ্যে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার না হলে ২৫-২৭ জুন পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি এবং ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন। তবে এসময়ে পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে বলে উল্লেখ্য করা হয়। তবে এসময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে পহেলা জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে হবে বলে জানান ফেডারেশনের নেতারা।

তবে এসব কর্মসূচির কারণে অনিশ্চয়তা ভর করছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কপালে। পহেলা জুলাই থেকে আদতে কি হবে তআ স্পষ্ট ভাবে জানে শিক্ষার্থীরা। নির্ধারিত পরিক্ষাগুলো হবে কীনা, তা নিয়ে একপ্রকার ধোঁয়াশা কাজ করছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, ফার্মেসি বিভাগ’সহ বেশ কিছু বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষায় কিছু সাবজেক্ট এর পরিক্ষার তারিখ রয়েছে এসময়ের মাঝে।

শিক্ষার্থীরা জানান, আগামী ১ জুলাই বা এর পরবর্তী কাছাকাছি সময়ে থাকা পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন তারা। ঈদের ছুটি কাটিয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসা নিয়েও দোটানায় ভুগছেন অনেকে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকেও পরীক্ষা হবে কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হচ্ছে না। এদিকে আবার শিক্ষক সমিতির পহেলা জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতির জন্য পরীক্ষা হওয়া নিয়েও সংশয় তাদের মনে।

এবিষয়ে ইবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা আগামী ১ তারিখ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল সকল কার্যক্রম থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার কথা আছে। তবে চলমান বিষয়টি নিয়ে কাঙ্ক্ষিত সমাধান পেয়ে গেলে আমাদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসতে পারে। তাই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের বিষয়টি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, দাবি মানা না হলে দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে সেটা ফেডারেশনের প্রজ্ঞাপনেই বলা আছে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। পূর্বনির্ধারিত পরিক্ষা সমূহের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রজ্ঞাপনে ১ তারিখ থেকে চলমান সকল পরীক্ষাও স্থগিত থাকবে – এমনটাই বলা আছে। বিষয়টি বিভাগের চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে যারা আন্দোলনে আছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। বিভাগের শিক্ষকরা বিভাগের পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে আমি চাইবো যেনো দ্রুত এর একটা সমাধান হয়ে যায়।

শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এধরণের আন্দোলন বা কর্মসূচি চলমান থাকলে অবশ্যই সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হতে পারে৷ তবে শিক্ষকরা চাইলে আবার সেই ক্ষতিটুকু পুষিয়ে নিতে পারবেন। শিক্ষকদের প্রতি আহবান থাকবে যখন বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে তারা যেন এই বিষয়ে নজর দিয়ে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে সহায়তা করে।