ঢাকা ০৬:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আগেই সমঝোতা জরুরি

নিজস্ব সংবাদ

বদিউল আলম মজুমদার; অর্থনীতিবিদ, উন্নয়নকর্মী, রাজনীতি বিশ্লেষক, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর বাংলাদেশি শাখার পরিচালক ও বৈশ্বিক সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি নাগরিক সংগঠন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

বদিউল আলম মজুমদার: প্রথমেই আমি একটি উদাহরণ দিতে চাই। মানুষের শরীরে অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে। আর সেই প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা রয়েছে। সেখানে আমরা এক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভূমিকা আরেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে সম্পন্ন করার চেষ্টা করলে সমস্যা অনিবার্য। ঠিক তেমনিভাবে একটি রাষ্ট্রেরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, অনেক পক্ষ রয়েছে।

প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান বা পক্ষের আলাদা আলাদা দায়িত্ব বা ভূমিকা থাকে। কেউ তার ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হয়ে গেলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে যায়। যেমন সরকার-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন সবই সরকারের অংশ। বৃহৎ অর্থে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন বিচার বিভাগ, জাতীয় সংসদ সবই সরকারের অংশ। তবে মূলত নির্বাহী বিভাগই সরকার। নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে যারা যুক্ত প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কিছু সুস্পষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তারা কোনো ব্যক্তির স্বার্থে নয়, কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থে নয়, কোনো দলের স্বার্থে নয় বরং জনগণের স্বার্থে কাজ করবে। তারা যখন এই ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হয় তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়।

দুর্ভাগ্যবশত আমাদের প্রশাসনকে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ করার কারণে দেশ একটি সংকটজনক অবস্থায় এসে ঠেকেছে। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিল ‘দিনবদলের সনদ’ নামক একটি নির্বাচনী ইশতেহার সামনে রেখে। তখন তাদের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দলীয়করণের অবসান ঘটানো হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনা হবে ইত্যাদি। কিন্তু সেটা হয়নি বরং দলীয়করণ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। দল এবং সরকারের মধ্যে যে পার্থক্যটা প্রয়োজন সেই পার্থক্যটা এখন আর নেই। ফলে একটি বিরাট সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি পক্ষপাতদুষ্ট না হতো তাহলে যেসব অপকর্ম হয়েছে তা হতো না।

নাগরিকের কিছু অধিকার থাকে। চলাফেরার অধিকার, সমাবেশ করার অধিকার, রাজনৈতিক দলের মিছিল-মিটিং করার অধিকার। এগুলোতে হস্তক্ষেপ করার মানে হলো মৌলিক অধিকারের হস্তক্ষেপ করা। গতকাল আমরা দেখেছি, বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসা লোকজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের মোবাইল ফোন চেক করা হচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ যদি একইভাবে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতে আসা লোকের বিরুদ্ধেও একই কাজ করত তাহলেও হয়তো কিছুটা যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু পুলিশ সেটা করেনি। অর্থাৎ পুলিশ-প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে। দৃশ্যমানভাবেই আমরা এসব পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ দেখেছি। এগুলো নিঃসন্দেহে উসকানিমূলক। আর পরোক্ষভাবে তারা আরও কত পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে আমরা তা জানি না। সহিংসতার পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায় কতটুকু আমাদের কাছে তার কোনো তথ্য নেই।

সাক্ষাৎকার- কালবেলা

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:১০:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩
৫৩০ বার পড়া হয়েছে

পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আগেই সমঝোতা জরুরি

আপডেট সময় ০৮:১০:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

বদিউল আলম মজুমদার; অর্থনীতিবিদ, উন্নয়নকর্মী, রাজনীতি বিশ্লেষক, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর বাংলাদেশি শাখার পরিচালক ও বৈশ্বিক সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি নাগরিক সংগঠন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

বদিউল আলম মজুমদার: প্রথমেই আমি একটি উদাহরণ দিতে চাই। মানুষের শরীরে অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে। আর সেই প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা রয়েছে। সেখানে আমরা এক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভূমিকা আরেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে সম্পন্ন করার চেষ্টা করলে সমস্যা অনিবার্য। ঠিক তেমনিভাবে একটি রাষ্ট্রেরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, অনেক পক্ষ রয়েছে।

প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান বা পক্ষের আলাদা আলাদা দায়িত্ব বা ভূমিকা থাকে। কেউ তার ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হয়ে গেলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে যায়। যেমন সরকার-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন সবই সরকারের অংশ। বৃহৎ অর্থে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন বিচার বিভাগ, জাতীয় সংসদ সবই সরকারের অংশ। তবে মূলত নির্বাহী বিভাগই সরকার। নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে যারা যুক্ত প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কিছু সুস্পষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তারা কোনো ব্যক্তির স্বার্থে নয়, কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থে নয়, কোনো দলের স্বার্থে নয় বরং জনগণের স্বার্থে কাজ করবে। তারা যখন এই ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হয় তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়।

দুর্ভাগ্যবশত আমাদের প্রশাসনকে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ করার কারণে দেশ একটি সংকটজনক অবস্থায় এসে ঠেকেছে। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিল ‘দিনবদলের সনদ’ নামক একটি নির্বাচনী ইশতেহার সামনে রেখে। তখন তাদের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দলীয়করণের অবসান ঘটানো হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনা হবে ইত্যাদি। কিন্তু সেটা হয়নি বরং দলীয়করণ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। দল এবং সরকারের মধ্যে যে পার্থক্যটা প্রয়োজন সেই পার্থক্যটা এখন আর নেই। ফলে একটি বিরাট সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি পক্ষপাতদুষ্ট না হতো তাহলে যেসব অপকর্ম হয়েছে তা হতো না।

নাগরিকের কিছু অধিকার থাকে। চলাফেরার অধিকার, সমাবেশ করার অধিকার, রাজনৈতিক দলের মিছিল-মিটিং করার অধিকার। এগুলোতে হস্তক্ষেপ করার মানে হলো মৌলিক অধিকারের হস্তক্ষেপ করা। গতকাল আমরা দেখেছি, বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসা লোকজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের মোবাইল ফোন চেক করা হচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ যদি একইভাবে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতে আসা লোকের বিরুদ্ধেও একই কাজ করত তাহলেও হয়তো কিছুটা যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু পুলিশ সেটা করেনি। অর্থাৎ পুলিশ-প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে। দৃশ্যমানভাবেই আমরা এসব পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ দেখেছি। এগুলো নিঃসন্দেহে উসকানিমূলক। আর পরোক্ষভাবে তারা আরও কত পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে আমরা তা জানি না। সহিংসতার পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায় কতটুকু আমাদের কাছে তার কোনো তথ্য নেই।

সাক্ষাৎকার- কালবেলা