বাড়ছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ
বিদেশি ঋণে উন্নয়ন কার্যক্রম চালাতে গিয়ে গত ১৫ বছরে দেশে পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ বেড়ে তিনগুণ হয়েছে, আর ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে হয়েছে চারগুণ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই চাপ এখনও সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও রিজার্ভ বাড়াতে না পারলে মেগা প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণ শোধ শুরু হলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর কয়েক বছরের মধ্যে ঋণের কিস্তির পরিমাণ বেড়ে এখনকার তুলনায় দ্বিগুণ হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি যেখানে ছিল ২১ বিলিয়ন ডলার, গত জুন মাস পর্যন্ত তা বেড়ে ৬২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের কিস্তি বাবদ বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হয়েছিল ৮৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা প্রথমবারের মত এক বিলিয়ন ডলারের ঘর পেরিয়ে যায়।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৩৫৬ কোটি ডলার। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এর পরিমাণ ৪২১ কোটি ডলারের ঘর ছাড়িয়ে যাবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মেট্রোরেলসহ কয়েকটা মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হলে চাপ আরও বাড়বে, যেখানে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে এখনই কিছুটা বেকায়দায় আছে সরকার। নানামুখী চাপের মধ্যে রিজার্ভ ইতিমধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলছেন, বিদেশি ঋণ পরিশোধের যে চাপ আছে, এখনও তা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যায়নি। জাতীয় বাজেটে এখনো অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধের তুলনায় বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ অনেক কম। তবে পরিস্থিতি বেশিদিন স্বস্তির জায়গায় থাকবে না।
“সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে বৈদেশিক ঋণে যে ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করা হয়েছে, তাতে নিকট ভবিষ্যতে সেই ঋণ পরিশোধের একটা চাপ অবশ্যই আসবে। বিদেশি ঋণ ডলারে পরিশোধ করতে হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রায় একটা চাপ পড়বে।”
সেই চাপ মোকাবিলা করতে রপ্তানি এবং প্রবাসী আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প দেখছেন না এই অর্থনীতিবিদ।
আর বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি‘র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলছেন, এ পরিস্থিতিতে তুলনামূলক কম সুদের ঋণের দিকে মনযোগ বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে।
“কয়েক বছরের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের প্রবাহ ব্যাপকভাবে বেড়ে যেতে পারে। তাই এখন থেকে সরকারের উচিত হবে আপাতত কয়েক বছর বৈদেশিক ঋণের চাপ কমানোর চেষ্টা হিসেবে কম সুদের এবং দীর্ঘ মেয়াদের ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করা।”