একুশ মানে বাংলা ভাষায় রাষ্ট্র শাসন
শহীদ মিনারের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদেরকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে? হয়তো ভাবার সময় হয়েছে তাই আমিও সে কথাই ভাবছিলাম আজ শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে।
‘৮০-‘৯০ দশকের ছেলে মেয়েরা অস্থির হয়ে থাকতো প্রভাত ফেরিতে যোগ দেবার জন্য। প্রয়োজনে ফুল চুরি করতো শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে। আজ (২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) দেখলাম অভিভাবকদের সম্মতিতে বাচ্চারা শহীদ মিনারে এসেছে ফুল সংগ্রহ করতে। এক বাবা’তো গর্ব করেই বলছিলেন মেয়েটা শহীদ মিনারে গেছে ফুল আনতে।
শহীদ মিনারে মাইক ব্যবহারের চল আগেও ছিলো। শৃঙ্খলা রক্ষায় মাইকে বলা হতো এবার অমুক স্কুল শ্রদ্ধা জানাবে। আমরা সারিবদ্ধভাবে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতাম ভাষা সৈনিকদের। এখন মাইকে বারবার সতর্ক করছে ছেলে-মেয়েদের, অভিভাবকদের – আপনারা শহীদ মিনার থেকে ফুল নিয়ে যাবেন না। আর আগের একুশে ফেব্রুয়ারি রাত বারোটা থেকেই যে গান বাজতো সে তুলনা বর্তমানের সাথে নাই-বা করলাম।
শহীদ মিনারে একদল যুবকের হাতাহাতি-মারামারি পর্বটাকেই একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে প্রধান আকর্ষণ হতেও দেখলাম একটি শহীদ মিনারে। তবে ভালোলেগেছে গালিগালাজ পর্বটি ছিলো বাংলায়। আমরা বাংলা ভাষায় রাষ্ট্র শাসন চাই।
এখন শহীদ মিনার পেছনে রেখে ছবি তোলার চলটা কিন্তু বেশ উপভোগের। একজনের ছবি তোলা শেষ না হলে অন্য জনের সুযোগ নেই। শহীদ স্মরণে যেন আগের সময়টা ছিলো দেবার, আর বর্তমানটা নেবার।
তবে আগে প্রভাত ফেরি শেষে একটি মিলাদ আর মিষ্টি বিতরণের মধ্য দিয়ে সকাল বেলাতেই ফুরিয়ে যেতে দেখতাম স্কুল কলেজের যে একুশে ফেব্রুয়ারি। সেখানে বর্তমানে যুক্ত হওয়া ‘বিশেষ অতিথিদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভা’র আয়োজনটা বেশ ভালো লেগেছে। এই সভার মতো শহীদ মিনারেরও একটা কেন্দ্রীয় কন্ট্রোলের কথা ভাবছিলাম। তাতে অন্তত শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে বিশৃঙ্খল অনুভূতিরা কহুব সহজে জায়গা করতে পারতো বলে মনে হয় না।
সর্বশেষ যে কোনো বাস্তবতায় আসুক না কেন- ‘ভাষা সৈনিক স্মরণে বিনম্র শ্রদ্ধায় একুশে ফেব্রুয়ারি’ এবং ‘বাংলা ভাষা’ আমার এবং আমাদের আমৃত্যু অহংকার।