ঢাকা ০৯:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যৌন হয়রানির দায়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ শিক্ষক বরখাস্ত

মোঃ সাহাদাৎ হোসেন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

ময়মনসিংহ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও নম্বর টেম্পারিং এর দায়ে উক্ত বিভাগের ২ শিক্ষক, সহকারি অধ্যাপক সাজন সাহাকে চুড়ান্ত ও বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সিন্ডিকেট কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির ফলাফলে শিক্ষকদ্বয়কে বরখাস্ত করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৪ই মার্চ) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবীর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, অদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪ তম বিশেষ সিন্ডিকেট কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব সাজন সাহাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত ও সহযোগী অধ্যাপক জনাব রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

গত ৪ মার্চ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক ছাত্রী সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়াসহ একাধিক নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী দিনে একই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রের বিরুদ্ধেও উঠে আসে নম্বর টেম্পারিং, ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার এবং নিরপরাধ শিক্ষকদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগ। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন নামে শিক্ষার্থীরা। একটানা ১৪ দিনের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে মানববন্ধনে অংশ নেয় বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকেরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, প্রক্টর ভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ব্যাংকে তালা দেয়া, অভিযুক্ত ২ শিক্ষকের কুশপুত্তলিকা দাহ এবং সর্বশেষ ঢাকা – ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।

গত ৬ মার্চ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক অফিস আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. আতাউর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ও সিন্ডিকেট সদস্য উম্মে সালমা তানজিয়া ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. এ কে এম আব্দুর রফিক।

১৩ই মার্চের অফিস আদেশে ২ শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্থায়ী বহিস্কারের দাবীতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ এবং মহাসড়ক অবরোধ করে। পরবর্তীতে ভিসি ও ডিসির অনুরোধে আন্দোলন থেকে সরে আসে শিক্ষার্থীরা। এসময় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমি তোমাদের শিক্ষক, আমি তোমাদের উপাচার্য, সিন্ডিকেটের কাছে আমি তোমাদের প্রতিনিধি। আমার উপর আস্থা রাখো, তোমরা যে বিচার চাও সে বিচারই পাবে।

এই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪তম বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় বৃহস্পতিবার ২ শিক্ষককে চুড়ান্ত ও সাময়িক বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দাবী আদায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোভাবে পরিচালনা করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫টি ডিপার্টমেন্টকে ভালোভাবে চালাতে হবে। এটা আমার জন্য অনেক চাপ হয়ে যায়। আমি ছাত্র ছাত্রীদের বলবো তারা যাতে শিক্ষকদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হয়। আর শিক্ষকদেরকে অনুরোধ করবো আপনাদের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যে চিরদিনের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, তা মাথায় রেখে এগিয়ে যান।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৩:২৯:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
১১৪ বার পড়া হয়েছে

যৌন হয়রানির দায়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ শিক্ষক বরখাস্ত

আপডেট সময় ০৩:২৯:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

ময়মনসিংহ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও নম্বর টেম্পারিং এর দায়ে উক্ত বিভাগের ২ শিক্ষক, সহকারি অধ্যাপক সাজন সাহাকে চুড়ান্ত ও বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সিন্ডিকেট কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির ফলাফলে শিক্ষকদ্বয়কে বরখাস্ত করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৪ই মার্চ) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবীর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, অদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪ তম বিশেষ সিন্ডিকেট কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব সাজন সাহাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত ও সহযোগী অধ্যাপক জনাব রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

গত ৪ মার্চ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক ছাত্রী সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়াসহ একাধিক নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী দিনে একই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রের বিরুদ্ধেও উঠে আসে নম্বর টেম্পারিং, ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার এবং নিরপরাধ শিক্ষকদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগ। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন নামে শিক্ষার্থীরা। একটানা ১৪ দিনের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে মানববন্ধনে অংশ নেয় বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকেরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, প্রক্টর ভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ব্যাংকে তালা দেয়া, অভিযুক্ত ২ শিক্ষকের কুশপুত্তলিকা দাহ এবং সর্বশেষ ঢাকা – ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।

গত ৬ মার্চ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক অফিস আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. আতাউর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ও সিন্ডিকেট সদস্য উম্মে সালমা তানজিয়া ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. এ কে এম আব্দুর রফিক।

১৩ই মার্চের অফিস আদেশে ২ শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্থায়ী বহিস্কারের দাবীতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ এবং মহাসড়ক অবরোধ করে। পরবর্তীতে ভিসি ও ডিসির অনুরোধে আন্দোলন থেকে সরে আসে শিক্ষার্থীরা। এসময় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমি তোমাদের শিক্ষক, আমি তোমাদের উপাচার্য, সিন্ডিকেটের কাছে আমি তোমাদের প্রতিনিধি। আমার উপর আস্থা রাখো, তোমরা যে বিচার চাও সে বিচারই পাবে।

এই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪তম বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় বৃহস্পতিবার ২ শিক্ষককে চুড়ান্ত ও সাময়িক বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দাবী আদায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোভাবে পরিচালনা করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫টি ডিপার্টমেন্টকে ভালোভাবে চালাতে হবে। এটা আমার জন্য অনেক চাপ হয়ে যায়। আমি ছাত্র ছাত্রীদের বলবো তারা যাতে শিক্ষকদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হয়। আর শিক্ষকদেরকে অনুরোধ করবো আপনাদের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যে চিরদিনের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, তা মাথায় রেখে এগিয়ে যান।