ঢাকা ১০:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আশুরার শোক পালনে ব্যস্ত ‘প্রধান ইমামবাড়ি গোয়ালখালী, খুলনা’

মামুনুর রশীদ রাজু, ব্যুরো চিফ

খুলনায় আশুরাকে ঘিরে প্রতিবছরের মতো এবারও বিশেষ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ ৭ই মহররম, খুলনার প্রধান ইমামবাড়ি গোয়ালখালী গোরস্তানে শিয়া সম্প্রদায় এবং সুন্নি (উর্দুভাষী) মুসলমানদের শোক পালনে উপচে পড়া ভিড় এবং দর্শনার্থীদের ভিড়ও ছিলো লক্ষ্যণীয়।

আশুরা ইসলাম ধর্মে একটি স্মরণীয় দিবস। ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কারবালার যুদ্ধ ও হোসাইন ইবনে আলীর (নবীজির নাতি) মৃত্যুকে স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে। আশুরার শোক পালন প্রতিবছর ৭ থেকে ১০ মহররম পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে থাকে।

প্রতিবছর আশুরাকে কেন্দ্র করে খুলনার খালিশপুর হয়ে ওঠে প্রতীকী এক কারবালা প্রান্তর। এসময় খালিশপুরের গোয়ালখালী গোরস্তানের ইমামবাড়িটি প্রাধান প্রতীকী ইমামবাড়ি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে থাকে। এখানে হোসাইন ইবনে আলীর একটি মাজার রয়েছে। শোনা যায় কারবালা থেকে কিছু মাটি এনে এখানে রাখা হয়েছে এবং ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর মাজার বা প্রতীকী বা সফরী কবর তৈরি করা হয়েছে।

খালিশপুর ও খুলনার বিভিন্ন শাখা প্রতীকী ইমামবাড়ি থেকে দলবদ্ধ ‘পাইপার বা কাশিদে হুসাইন’রা ‘নূরনামা-কালেমা’ পড়তে পড়তে এই প্রধান ইমামবাড়িতে উপস্থিত হয় এবং মাজারকে ৭ বার প্রদক্ষিণ করেন। এরপর প্রধান ইমামবাড়ি থেকে শাখা ইমামবাড়ির পক্ষে ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর মাজারের মাটি সংগ্রহ করে ফিরে যান তারা। প্রতীকী কারবালা বা ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর কবরের মাটি শাখা ইমামবাড়িতে রেখে আশুরার দিন পর্যন্ত দোয়া-কালামসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শোক পালনের রেওয়াজ রয়েছে খালিশপুরের উর্দুভাষিদের মাঝে।

শিয়া সম্প্রদায় তাদের শোক পালনে দলবদ্ধ মিছিলের মাধ্যমে স্মরণ করে ইমাম হোসাইন ইবনে আলীকে। শিয়া মুসলমানদের মধ্যে আশুরা বৃহত্তর শোকের এবং বিশাল বিক্ষোভের মাধ্যমে পালিত হয় দিনটি। শিয়াদের মিছিলটিও গোয়ালখালীর মাজার পরিদর্শন করে আজ (৭ মহররম) দুপুরে।

সর্বশেষ আগামী ১০ মহররম প্রতিটি শাখা ইমামবাড়ি থেকে ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর কবর থেকে আনা সেই মাটির তাজিয়া মিছিল নিয়ে প্রধান ইমামবাড়িতে নিয়ে যায়াওয়া হবে এবং সেই মাটি দাফন করার মধ্য দিয়ে শেষ হবে খুলনার শিয়া সম্প্রদায় এবং সুন্নি (উর্দুভাষী) মুসলমানদের (ইমাম হোসাইন ইবনে আলী স্মরণে) আশুরার শোক পালনের প্রধান কার্যক্রম।

অন্যদিকে, সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে আশুরা উদযাপন রোজা রাখার মাধ্যমে পালন করা হয় কেননা এটি মূসা ও ইস্রায়েলীয়দের পরিত্রাণের দিনটিকে চিহ্নিত করে যারা এই দিনে বাইবেলে চিত্রিত মিশর থেকে সফলভাবে পালিয়ে গিয়েছিল (যেখানে তারা ক্রীতদাস হিসেবে নির্যাতিত হতো) ও মূসা লোহিত সাগরকে বিভক্ত করার জন্য আল্লাহর শক্তিকে আহ্বান করেছিলেন। হোসাইনের মৃত্যুকে সুন্নিদের কাছে একটি বড় বিয়োগান্তক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হলেও নির্দিষ্ট বিধানের উপর নির্ভর করে প্রকাশ্যে শোক প্রদর্শনকে নিরুৎসাহিত বা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়ে থাকে।

সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর হাদিসের উপর ভিত্তি করে তিন ধাপ বিশিষ্ট রোজা রয়েছে। আশুরার পূর্বদিন, আশুরার দিন ও আশুরার পরের দিন রোজা রাখা বাধ্যতামূলক না হলেও এটাকে দৃঢ়ভাবে উৎসাহিত করা হয়।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১০:৩১:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
১৩৯ বার পড়া হয়েছে

আশুরার শোক পালনে ব্যস্ত ‘প্রধান ইমামবাড়ি গোয়ালখালী, খুলনা’

আপডেট সময় ১০:৩১:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

খুলনায় আশুরাকে ঘিরে প্রতিবছরের মতো এবারও বিশেষ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ ৭ই মহররম, খুলনার প্রধান ইমামবাড়ি গোয়ালখালী গোরস্তানে শিয়া সম্প্রদায় এবং সুন্নি (উর্দুভাষী) মুসলমানদের শোক পালনে উপচে পড়া ভিড় এবং দর্শনার্থীদের ভিড়ও ছিলো লক্ষ্যণীয়।

আশুরা ইসলাম ধর্মে একটি স্মরণীয় দিবস। ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কারবালার যুদ্ধ ও হোসাইন ইবনে আলীর (নবীজির নাতি) মৃত্যুকে স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে। আশুরার শোক পালন প্রতিবছর ৭ থেকে ১০ মহররম পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে থাকে।

প্রতিবছর আশুরাকে কেন্দ্র করে খুলনার খালিশপুর হয়ে ওঠে প্রতীকী এক কারবালা প্রান্তর। এসময় খালিশপুরের গোয়ালখালী গোরস্তানের ইমামবাড়িটি প্রাধান প্রতীকী ইমামবাড়ি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে থাকে। এখানে হোসাইন ইবনে আলীর একটি মাজার রয়েছে। শোনা যায় কারবালা থেকে কিছু মাটি এনে এখানে রাখা হয়েছে এবং ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর মাজার বা প্রতীকী বা সফরী কবর তৈরি করা হয়েছে।

খালিশপুর ও খুলনার বিভিন্ন শাখা প্রতীকী ইমামবাড়ি থেকে দলবদ্ধ ‘পাইপার বা কাশিদে হুসাইন’রা ‘নূরনামা-কালেমা’ পড়তে পড়তে এই প্রধান ইমামবাড়িতে উপস্থিত হয় এবং মাজারকে ৭ বার প্রদক্ষিণ করেন। এরপর প্রধান ইমামবাড়ি থেকে শাখা ইমামবাড়ির পক্ষে ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর মাজারের মাটি সংগ্রহ করে ফিরে যান তারা। প্রতীকী কারবালা বা ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর কবরের মাটি শাখা ইমামবাড়িতে রেখে আশুরার দিন পর্যন্ত দোয়া-কালামসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে শোক পালনের রেওয়াজ রয়েছে খালিশপুরের উর্দুভাষিদের মাঝে।

শিয়া সম্প্রদায় তাদের শোক পালনে দলবদ্ধ মিছিলের মাধ্যমে স্মরণ করে ইমাম হোসাইন ইবনে আলীকে। শিয়া মুসলমানদের মধ্যে আশুরা বৃহত্তর শোকের এবং বিশাল বিক্ষোভের মাধ্যমে পালিত হয় দিনটি। শিয়াদের মিছিলটিও গোয়ালখালীর মাজার পরিদর্শন করে আজ (৭ মহররম) দুপুরে।

সর্বশেষ আগামী ১০ মহররম প্রতিটি শাখা ইমামবাড়ি থেকে ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর কবর থেকে আনা সেই মাটির তাজিয়া মিছিল নিয়ে প্রধান ইমামবাড়িতে নিয়ে যায়াওয়া হবে এবং সেই মাটি দাফন করার মধ্য দিয়ে শেষ হবে খুলনার শিয়া সম্প্রদায় এবং সুন্নি (উর্দুভাষী) মুসলমানদের (ইমাম হোসাইন ইবনে আলী স্মরণে) আশুরার শোক পালনের প্রধান কার্যক্রম।

অন্যদিকে, সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে আশুরা উদযাপন রোজা রাখার মাধ্যমে পালন করা হয় কেননা এটি মূসা ও ইস্রায়েলীয়দের পরিত্রাণের দিনটিকে চিহ্নিত করে যারা এই দিনে বাইবেলে চিত্রিত মিশর থেকে সফলভাবে পালিয়ে গিয়েছিল (যেখানে তারা ক্রীতদাস হিসেবে নির্যাতিত হতো) ও মূসা লোহিত সাগরকে বিভক্ত করার জন্য আল্লাহর শক্তিকে আহ্বান করেছিলেন। হোসাইনের মৃত্যুকে সুন্নিদের কাছে একটি বড় বিয়োগান্তক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হলেও নির্দিষ্ট বিধানের উপর নির্ভর করে প্রকাশ্যে শোক প্রদর্শনকে নিরুৎসাহিত বা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়ে থাকে।

সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর হাদিসের উপর ভিত্তি করে তিন ধাপ বিশিষ্ট রোজা রয়েছে। আশুরার পূর্বদিন, আশুরার দিন ও আশুরার পরের দিন রোজা রাখা বাধ্যতামূলক না হলেও এটাকে দৃঢ়ভাবে উৎসাহিত করা হয়।