ফ্যাসিবাদের দোসররা মাথাচাড়া দিতে শুরু করছে: তারেক রহমান
মাফিয়া প্রধানের রেখে যাওয়া সুবিধাভোগীরা ঘরে-বাইরে, সরকারে এবং প্রশাসনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) ‘২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা রজতজয়ন্তী উপলক্ষে’- এক আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় জেডআরএফ’র ওভারসিজ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ডা. জুবাইদা রহমানও ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বক্তব্যে রাখেন।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বৈরাচারের বুলেটবিদ্ধ হয়ে হাজারো মানুষ এখনো হাসপাতালের বিছানায়, রাজপথে শহীদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। অথচ পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীদের মধ্যে ন্যূনতম অনুতাপ নেই। বরং মাফিয়া প্রধানের রেখে যাওয়া সুবিধাভোগীরা ইতিমধ্যে ঘরে-বাইরে, সরকারে এবং প্রশাসনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চাইছে। ষড়যন্ত্রের ডালপালা বিস্তার করতে চাইছে। ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত শুরুতেই উপড়ে ফেলতে না পারলে তাদের বিষাক্ত দংশনে ছাত্র-জনতার শত শহীদের অর্জনে গণতন্ত্র আবারও বিপন্ন হবে।
তিনি বলেন, গণহত্যাকারী পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর করে রাষ্ট্রকে জনগণের প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে একটি সরকারের জন্য আড়াই মাস হয়তো যথেষ্ট সময় নয়। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করণীয় নির্ধারণ এবং অগ্রাধিকার ইস্যু ঠিক করার জন্য হয়তো আড়াই মাস কম সময়ও নয়। আমি আগেও বলেছি, সরকার এজেন্ডা সেটিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থ হলে সেটি প্রত্যাশিত গণতন্ত্র উত্তোরনের পথে অনাকাঙ্ক্ষিত বাধার কারণ হয়ে উঠতে পারে। গণঅভ্যুত্থান সফলকারী জনগণের সামনে সরকারের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
তারেক রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময় ভিন্ন রকম বক্তব্যে এসেছে। এমন একটি কাঙ্ক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সরকারের বক্তব্যের গরমিল জনগণের মনে নানা ধরনের সন্দেহ ও সংশয় উদ্বেগ করে।
জনগণ সরকারকে আরও দায়িত্বশীল এবং গণমুখী ও কার্যকর দেখতে চায়। কারণ অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ও জনগণের সরাসরি ভোটে একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কোনই বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমান সরকারকে নিঃস্বার্থ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের নিঃস্বার্থ সমর্থনের প্রতি নিঃস্বার্থ মূল্য দেয়া এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সঠিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সরকার বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই একটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। আমি বরাবর সংস্কারের পক্ষে। তবে সেটি ধারাবাহিক ও চলমান একটি প্রক্রিয়া। কখনো কখনো সেটি সময়সাপেক্ষ। তবে যেকোনো সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারিত্ব সৃষ্টি না হলে সেই সংস্কার শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দেয় না বা পাওয়া যায় না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পলাতক মাফিয়া চক্রের দুঃশাসনের সময়, পলাতক স্বৈরাচারের সমর্থিত নেতাকর্মী সারা দেশে অবৈধভাবে ভিন্নমতের অনেক মানুষের জমি-জায়গা দখল করেছিল। ফ্ল্যাট, দোকান, নদী-নালা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও তারা দখল করেছিল।
বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জবরদখলকারীদের কাছ থেকে অনেকেই তাদের বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গা-জমি-সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। সুতরাং সেগুলো পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে একটি কাযকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।