একমাত্র জনগণই পারে সংবিধান পরিবর্তন করতে,অন্য কেউ না: মির্জা ফখরুল
সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সংবিধান পরিবর্তনে বিএনপির দ্বিমত নেই, সেটা সংবিধান পরিবর্তন বা নতুন করে লিখন যাই হোক না কেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কে করবে? এটি করার এখতিয়ার কার? সংবিধান পরিবর্তনের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের।
আর জনগণের মালিকানার প্রতিফলন হয় সংসদে। কিন্তু কেউ কেউ বলছেন যে, আমরা করে ফেলবো। আপনারা কারা? আপনাদের ম্যান্ডেট কোথায়? কেউ কেউ বলছেন, জুলাই- আগস্টের ম্যান্ডেট, এটা এভাবে বলা যায় না।’
শনিবার লন্ডনে বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি। যুক্তরাজ্য বিএনপির আয়োজনে সভায় বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিএনপি মহাসচিব।
বিপ্লবী সরকার গঠনের প্রশ্ন তুলে ফখরুল বলেন, ‘তাহলে আপনারা বিপ্লবী সরকার গঠন করলেন না কেন? বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে পারতেন। এই সংবিধানের অধীনেই আপনারা শপথ নিয়েছেন। তবে প্রয়োজনীয় যে বিষয়গুলো সংবিধানে আছে, সে পরিবর্তনগুলো আনতে হবে। সংবিধান সংস্কার যে কমিটি করা হয়েছে, বিএনপি তার সঙ্গেও একমত।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে হবে। এখন সমানে হঠকারিতা করার কোনো সুযোগ নেই, একটু স্লিপ করলেই একদম শেষ, এজন্য সবাইকে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে কথাবার্তাসহ সবকিছুতেই সাবধান থাকতে হবে। এবার যদি ভুল হয়, তাহলে নতুন একটি বাংলাদেশ তৈরি করার যে সুযোগ এসেছে, সেটি আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। পতিত ফ্যাসিস্ট দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘গত ১৫ বছর আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতির যে সংস্কৃতি, সেই সংস্কৃতিকে মর্যাদা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিধানকে সন্নিবেশিত করেছিলেন। সংবিধানে এই বিধানটি সংযুক্ত হওয়ার পর নির্বাচনের পূর্বে বা পরে যে নৈরাজ্যমূলক অবস্থার সৃষ্টি হতো সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
পর পর তিনটি নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছিলো। সে সময় কারও কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু ২০০৮ সালে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে সুকৌশলে সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে ফেলার কাজটি শুরু করেন। ২০১২ সালের মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করে দেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা-অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তাদের দুষ্কর্ম, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণেই দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিলো।
আওয়ামী লীগের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দুটো বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়, একটি হচ্ছে সন্ত্রাস ও অপরটি দুর্নীতি। জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখার যে প্রবণতা, সেজন্য তারা অনেক কিছুই করেছে। তাদের দুর্নীতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলে বিচারপতি খায়রুল হকের ভূমিকা নিয়ে মহাসচিব বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের একটি রায় অত্যন্ত কলঙ্কজনক অধ্যায়, যা বিচারপতি খাইরুল হক দ্বারা হয়েছিল। তিনি ন্যায়বিচারের সব কিছুকে জলাঞ্জলি দিয়ে শেখ হাসিনার ইচ্ছাকে চরিতার্থ করার জন্যে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা যেতে পারে বলে রায় দিয়েছিলেন।
যে রায়টি তিনি দিয়েছিলেন তা ছিল একটি সংক্ষিপ্ত রায়, কিন্তু ১৬ মাস পরে কিছু পরিবর্তন করে একটি পূর্ণাঙ্গ রায় দেয়া হলো। সেই রায়টি বাংলাদেশের রাজনীতিকে শেষ করে দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর আর একটি নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য হয়নি।